মানিকগঞ্জ: ইচ্ছে ছিল পড়াশুনা শেষ করে ভালো চাকরি নিয়ে সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবো। শেষ পর্যন্ত পড়াশুনার ইচ্ছা পূরণ না হলেও ত্যাগ আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে অল্পদিনেই সংসারের হাল ধরতে পেরেছি।
কথাগুলো বলছিলেন, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের সুরাত আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৮)। স্বল্প পরিসরে মৌমাছির চাষ শুরু করে এখন তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মাইলাগী গ্রামেসহ বিভিন্ন জেলায় তার মৌ-চাষের প্রজেক্ট রয়েছে। সাইফুলের এ সফলতার গল্প নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। সরেজমিন মানিকগঞ্জে তার মৌমাছি খামারে আলাপের সময় সাইফুল ইসলাম তুলে ধরেন মৌ-চাষের বিভিন্ন দিক।
২০০৮ সালে মাত্র ১৪টি মৌমাছির বাক্স নিয়ে শখের খেয়ালে শুরু হয় তার ব্যবসা। সেখান থেকে তিনি আজ কয়েকশ’ বাক্সের মালিক। মৌচাষে ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মাইলাগী গ্রাম থেকেই শুরু তার ব্যবসা।
মাইলাগী গ্রামের আফসার মাতবরের জমিতে ৭২টি বাক্স নিয়ে এবার গড়ে তুলেছেন তার খামার। ব্যবসার শুরু থেকে প্রতি বছর সরিষা চাষের সময়ে তিনি ওই একই স্থানে ব্যবসা করে আসছেন।
এসময় তিনি বলেন, প্রতিটি বাক্স তৈরিতে তার খরচ হয় ৫০০ টাকা। এরপর প্রতিটি বাক্সের জন্যে ১০টি করে মৌচাক ক্রয় করতে হয়, যার প্রতিটি চাকের মূল্য পাঁচশ ৫০টাকা করে। অর্থ্যাৎ মৌমাছিদের মধু সংগ্রহ করে জমা করার ওই প্রতিটি বাক্সের মূল্য ছয় হাজার টাকা। প্রতিটি বাক্স দিয়ে কমপক্ষে দুই বছর অনায়াসে মধু সংগ্রহ করা যায়।
প্রতিটি বাক্সে একটি করে রাণী মৌমাছি ছাড়াও অসংখ্য পরিমাণে মৌমাছি থাকে। প্রতিটি মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ওই বাক্সে জমা করে। এরপর সাত থেকে দশ দিন পরপর একবার করে ওই বাক্স থেকে প্রায় দুই কেজি পরিমাণ মধু সংগ্রহ করেন তিনি।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে ওই মধু সংগ্রহের কাজ। এতে করে প্রতিটি বাক্স থেকে ছয় বারে প্রায় ১২ কেজি মধু সংগ্রহ করতে পারবেন তিনি। অর্থ্যাৎ ৭২টি বাক্স থেকে এবারের সরিষা ফুল থেকে তিনি কমপক্ষে ৮৬৪ কেজি মধু সংগ্রহ করবেন।
মৌমাছি দিয়ে চাষ করা ওই মধুগুলো খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা করে বিক্রি করলেও এখনো পর্যন্ত এ বছরের পাইকারি দাম সম্পর্কে কিছু জানতে পারেননি তিনি। তবে খুব শিগগিরই পাইকারি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলেও জানান। গত বছর দু’শ টাকা করে পাইকারি বাজারে মধু বিক্রি করলেও এবারের প্রত্যাশা আড়াইশ টাকা।
ওই বাক্সের মৌমাছিগুলো দিয়ে বছরে পাঁচ প্রক্রিয়ায় মধু সংগ্রহ করেন তিনি। এরমধ্যে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মাইলাগী গ্রাম থেকে। কালিজিরা এবং ধনিয়া থেকে মধু সংগ্রহ করেন শরিয়তপুরের জাজিরা এলাকা থেকে। লিচু থেকে মধু সংগ্রহ করেন পাবনার ঈশ্বরদী থেকে।
এছাড়াও সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকা থেকে সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করেন তিনি। এভাবেই মধু সংগ্রহে সারা বছর ব্যস্ত সময় পার করেন সাইফুল।
ঢাকার মধু ব্যবসায়িরা তার কাছ থেকে পাইকারি মূল্যে মধু কিনেন। এছাড়া এপি, স্কয়ার ও ভারতের ডাবর কোম্পানির কাছে মধু বিক্রয় করেন বলেও দাবি সাইফুলের।
এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মৌমাছি চাষ করে সংসার জীবনে বেশ ভালোই আছি। তবে পাইকারি মধু বিক্রিতে সরকারিভাবে দাম নির্দ্দিষ্ট করে দিলে আরও বেশি লাভবান হওয়া যেতো বলে অভিমত সাইফুলের।
মানিকগঞ্জ খামার বাড়ির ডেপুটি ডিরেক্টর আলীমুজ্জামান মিয়া বাংলানিউজকে জানান, জেলার ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন ৭২ জন মৌচাষি। মানিকগঞ্জ জেলা থেকে ৫০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এসএইচ