ঢাকা: বছরে কোটি টাকা টাকারও বেশি মূসক (মূল্য সংযোজন কর) ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বনামধন্য সুপারসপ আগোরার বিরুদ্ধে।
মূসক কর্মকর্তারা বলছেন, বছরে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকারও বেশি পণ্য ক্রয়-বিক্রি করে রহিম আফরোজের মালিকানাধীন সুপারশপ আগোরা।
কিন্তু এতে কোনো ভ্যাট (মূসক) চালান নেই। বিভিন্ন কৌশলে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র জানায়, প্রতিমাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হিসেবে বছরে ৩৬০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করা হয় আগোরায়। এর বিপরীতে একই পরিমাণ টাকার পণ্য ক্রয়ও করে সুপারশপটি। কিন্তু ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে নেই।
সম্প্রতি মাহবুব মিয়া হুমায়ূন নামে একজন ভোক্তা আগোরার মূসক ফাঁকির বিষয়টি মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে ডাক যোগে লিখিত অভিযোগ করেন।
একই অভিযোগ করে আগোরার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও চিঠি দেন ওই ক্রেতা। তবে কোনো ফল হয়নি।
এর আগে আরও অনেক ভোক্তা মূসক গোয়েন্দায় আগোরার বিরুদ্ধে নকল ও অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি, অতিরিক্ত মূল্য ধরে মূসক আদায় ও মূসক ফাঁকিসহ নানা অভিযোগ করেন।
প্রাথমিক তদন্তেও এসব অভিযোগের সত্যতা পান গোয়েন্দারা। আগোরা একাধারে ক্রেতা ও বিক্রেতা। মূসক ফাঁকির কৌশল হিসেবে বিক্রয় হিসেব রাখলেও ক্রয় হিসেব রাখে না।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে আগোরার প্রধান কার্যালয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালায় মূসক গোয়েন্দার একটি দল।
অপর একটি অভিযানে নামে প্রতিষ্ঠানটির ঝিগাতলায় সীমান্ত স্কয়ারের আউটলেটে।
অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র বলছে, কোনো কারখানা থেকে পণ্য ক্রয় করলে চালানের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ মূসক দিতে হয়। আগোরা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওই মূসক দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ছিল।
সুপারশপ হিসেবে বিক্রয়ের ওপর ৪ শতাংশ মূসক দিতে হয়। কিন্তু আগোরা ভোক্তা থেকে ৪ শতাংশ মূসক আদায় করলেও সঠিকভাবে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয় না।
‘সাড়ে ৫ ঘণ্টার সাঁড়াশি অভিযানে গোয়েন্দা দল ‘মূসক চালানহীন শত শত কোটি টাকা’র পণ্য ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে,’ বলেন একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো চালান দেখাতে পারেনি আগোরা কর্তৃপক্ষ। প্রতিমাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বেশি ও বছরে ৩৬০ কোটি টাকার অধিক পণ্য বিক্রয়ের হিসেব পাওয়া গেছে।
অভিযানে ২০১৩ সাল থেকে আগোরার মাসিক ও বার্ষিক ক্রয়-বিক্রয়ের নথিপত্র এবং কম্পিউটার জব্দ করেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগকারী ভোক্তা মাহবুব মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আগোরার এই মূসক ফাঁকি ধরতে পেরেছি। নির্দিষ্ট ভ্যাট না দেওয়ার প্রমাণ আছে আমার কাছে। এসব নিয়েই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।
‘শুধু আগোরা নয়, আরও অনেক সুপারশপেরই একই অবস্থা। তাদের বিরুদ্ধেও মূসক ফাঁকির লিখিত অভিযোগ করবো,’ বলেন তিনি।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক এ কে এম সুলতান মাহমুদ জানান, পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো মূসক চালান দেখাতে পারেনি আগোরা কর্তৃপক্ষ।
‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আগোরা বছরে কয়েক কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিচ্ছে। ’
তিনি জানান, সুপারশপে বিক্রির ওপর ৪ শতাংশ মূসক থাকলেও তা সঠিকভাবে দেয় কিনা সন্দেহ রয়েছে। যাছাই শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান ও তল্লাশি চালানো হয়েছে।
এর আগে অনেক ভোক্তা মূসক অধিদফতরের ফেসবুক পেজেও (https://web.facebook.com/vatintelligencebd/?fref=ts) বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন বলে জানান বেলাল হোসাইন চৌধুরী।
পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে মূসক ফাঁকির বিষয়ে জানতে আগোরার চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) হারুনুর রশিদের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
আরইউ/এমএ