ঢাকা: ব্যক্তিগত পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) উদ্যোক্তা এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইনে বৈদেশিক লেনদেনে ভোগান্তি কমাতে ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই ভার্চুয়াল কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা টোফেল, আইইএলটিএস’র মতো পড়াশোনার খরচের ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ পাঠাতে পারবে। আইটি উদ্যোক্তারাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন।
বেসিস সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন মার্কেট প্লেস যেমন- উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, ব্ল্যাকবেরি, ফায়ারফক্স ছাড়াও বিভিন্ন গেমস, সফটওয়্যার লাইসেন্স, মোবাইল কিংবা গেমস অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ভেন্ডর সার্টিফিকেশন পরীক্ষার ফি, ডোমেইন নিবন্ধন, হোস্টিং, ক্লাউড সেবা, হ্যাকাথন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার অর্থ পরিশোধ করা যাবে।
মোবাইল অ্যাপ অনলাইন বাজারে ছাড়ার জন্য বিশ্বখ্যাত অ্যাপ স্টোরে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিবন্ধন ছাড়াও অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কোর্স কিংবা ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমের প্রয়োজন হয়।
বেসিস সভাপতি বলেন, অর্থ পরিশোধের সহজ মাধ্যম না থাকায় বাংলাদেশের ব্যক্তি পর্যায়ের অ্যাপস নির্মাতা বা প্রোগ্রামাররা অনেকেই নানা সমস্যার মধ্যে ছিলেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলো তারা। বেসিসের দাবি এবং অ্যাপস ডেভেলপার ও প্রোগ্রামারদের সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ ভার্চুয়াল কার্ড চালুর নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
‘প্রত্যাশা করি এই কার্ডের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনলাইন লেনদেনে যে ভোগান্তি ছিলো তা দূর হয়ে যাবে। ফলে আমাদের তরুণরা তাদের মানোন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পেশায় সম্পৃক্ত হতে আরও আগ্রহী হবে। ’
উদ্যোগ সফল করতে বেসিসকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে ভার্চুয়াল কার্ড চালুর মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিখাতে আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বর্তমানে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের মাধ্যমে আশি শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় বলেও এসময় জানান সায়েম আহমেদ।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ বলেন, ২০১১ সালে প্রথম ভার্চুয়াল কার্ড চালু করা হয়। সীমিত উদ্যোগে চালুর পর বেসিস সদস্যরা তা ব্যবহারের সুবিধা পেতেন। শিক্ষার্থী এবং আইটি উদ্যোক্তাদের জন্য এবারই প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হলো। তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ও গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যাংকটি সাড়ে নয়শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে জানান তাবরেজ।
এক পশ্নের জবাবে ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম জানান, বাৎসরিক একশ’ টাকা রিচার্জ করে কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে।
ভবিষ্যতে তিনশ’ ডলারের সীমা আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করেন বেসিস সভাপতি।
সংগঠনের সভাপতি শামীম বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড চালুর জন্য বিভিন্ন ব্যাংককে অনুমোদন দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারন্যাশনাল ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। ব্যক্তি পর্যায়ের অ্যাপস ডেভেলপার বা প্রোগ্রামারদের অনলাইন পেমেন্ট সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেসিসের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো।
কার্ড পেতে করণীয়
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সব শাখায় ভার্চুয়াল কার্ড প্রাপ্তির সুবিধা থাকবে। কার্ডটি গ্রহণের জন্য আবেদনকারীকে প্রোগ্রামার, ডেভেলপার বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রমাণ দেখাতে বেসিস থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
এজন্য বেসিস বা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দেওয়া মোবাইল অ্যাপ/গেম/হ্যাকাথন ইত্যাদির সার্টিফিকেট প্রমাণ দিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, মহাসচিব উত্তম কুমার পাল, পরিচালক সানি মো. আশরাফ খান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬/আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা
এমআইএইচ/জেডএস