ঢাকা: এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় পোল্যান্ডের নাগরিক পিটার শজেপ্যান মাজুরেকর বাসা আবারও অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
অভিযানে ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ পিটারের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়।
পিটারসহ তিন সিটি ব্যাংক কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১২ টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৮ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসার এ-১২ ফ্ল্যাটে এ অভিযান পরিচালনা করে ডিবি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে অভিযান পরিচালনায় অংশ নেওয়া এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, পিটারকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই পিটারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার ব্যক্তিগত ল্যাপটপ, মোবাইলফোন ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করেছি।
একই সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও গাড়ি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনা্ল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় রাঘোব বোয়ালরা জড়িত। বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড শাখা ও আন্তর্জাতিক কার্ড জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা মিলে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়াও ব্যাংকের কর্মকর্তা, আবাসিক হোটেল ও ট্রাভেল এজেন্সির লোকজনও জড়িত রয়েছে জানান তিনি।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। অন্যান্য ব্যাংকের যেসব জালিয়াতি হয়েছে তার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দুই প্রবাসীও জড়িত রয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই দেশ ত্যাগ করেছে তারা। তাদের ব্যাপারে আমরা ইন্টারপোল ও সে দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবো। এছাড়া বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, ইটালী ও ইউক্রেনের নাগরিকের সম্পৃক্ততাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনটি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ব্যাপারেও খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
গত এক বছরে বিশ্বে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যাংক জালিয়াতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, গত ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজধানীর ইস্টার্ন, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চার বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে কার্ডের তথ্য চুরি ও পরবর্তী সময়ে কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকদের অজান্তে টাকা তুলে নেওয়া হয়। বিষয়টি ১২ ফেব্রুয়ারি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় বনানী থানায় ইউসিবি এবং পল্লবী থানায় সিটি ব্যাংক আলাদা দু’টি মামলা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতির ঘটনায় ৪টি ব্যাংকের ৪০ জন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের হিসাব থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬
এসজেএ/এনএ/ওএইচ
** ছয়দিনের রিমান্ডে বিদেশি ও তিন সিটি ব্যাংক কর্মকর্তা
** সিটি ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই জালিয়াতি
** পোল্যান্ডের নাগরিক ও সিটি ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক