ঢাকা: ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতি আগামী ১০ বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর (আসিয়ান) জিডিপিতে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ করতে পারে।
আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের (আজিয়াটা) সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ টি কার্নি।
আসিয়ান ডিজিটাল রিভোল্যুশন নামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, যে সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করতে হবে এবং নীতিগতভাবে কোন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে টেলিযোগাযোগ খাত তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া এতে কয়েকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে আসিয়ান ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে।
এ অঞ্চলের সমন্বিত জিডিপি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ; শিক্ষিত জনসংখ্যা ৬০ কোটির বেশি যার ৫০ শতাংশের বয়সই ৩০ বছরের নিচে, উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রমাণ রেখে এবং নতুন প্রযুক্তিতে ধারবাহিকভাবে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি মানসম্মত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এ টি কার্নির পার্টনার ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের হেড অব কমিউনিকেশনস, মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি প্র্যাকটিস এবং প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক নবীন মেনন বলেন, বাজারের আকার ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার দিক থেকে আসিয়ানের মত সম্ভাবনাময় অঞ্চল কমই আছে, বিশেষ করে যখন ডিজিটাল অর্থনীতির প্রশ্নটি সামনে আসে। এ অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার বয়স ৩০ বা তার কম। আর তাদের মধ্যে প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক বেশি থাকে বলে ডিজিটাল অর্থনীতিতে এই গ্রাহকরা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
‘প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী দক্ষতা, তরুণ সমাজ এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি আসিয়ানকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে,’ বলেন তিনি।
আজিয়াটার প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জামালউদ্দিন ইব্রাহিম বলেন, উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে আসিয়ান ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা প্রস্তুত রয়েছে। এ অর্থনীতির মাঝে রয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সিটি, সার্বজনীন ডিজিটাল সেবা ও অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। তবে ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ার লক্ষ্যে গণমানুষের মধ্যে প্রযুক্তিটির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য সরকারি লক্ষ্য এবং শিল্পের সমন্বয়সহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও জোরালো ডিজিটাল এজেন্ডা প্রয়োজন।
এছাড়া আসিয়ান অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিশ্রুতি- শুল্কমুক্ত পণ্য, সেবা, বিনিয়োগ, দক্ষ শ্রমিক ও মূলধনের অবাধ আদান-প্রদানও এ খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে অঞ্চলটির অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য যে বিষয়গুলো ও নীতিগত পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করা উচিত সেগুলো হচ্ছে- একটি ডিজিটাল কর্মকৌশল তৈরি করা যা দেশভিত্তিক নয়, হবে পুরো অঞ্চলভিত্তিক; ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারেনট সেবার প্রসারে প্রতিটি দেশে প্রতিটি অপারেটরের জন্য ২০ মেগাহার্জ বাড়তি তরঙ্গ বরাদ্দ; প্রতিটি বাজারে চারটির বেশি মোবাইল ফোন অপারেটর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা; স্থানীয় কোম্পানির বিকাশে দেশীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত নীতি নির্ধারণ।
এছাড়া শুধু ডিজিটাল ব্যাংক চালুর মত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবায় উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ; একটি নির্দিষ্ট ডিজিটাল পেমেন্ট প্লাটফর্ম তৈরি, শুরুতে দেশ-ভিত্তিক এবং পরবর্তীতে তা হবে আসিয়ান-ভিত্তিক; প্রযুক্তি-ভিত্তিক ব্যবসার প্রসার ও গ্রাহক সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩৫টি ‘স্মার্ট’ সিটি গড়ে তোলা; মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনসেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি দেশে একটি জাতীয় পরিচয় সনাক্ত করা এবং তা যেন পুরো আসিয়ান জুড়ে ব্যবহার করা যায় তা নিশ্চিত করা; পুরো অঞ্চলে সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ আইনের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে আসিয়ান’র ডিজিটাল অর্থনীতির প্রতি আস্থা ও নিরাপত্তাবোধ তৈরি; কে-১২ ও উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ডিজিটাল উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি হিসাবে আজিয়াটা গ্রুপ ৯টি দেশে ২৬ কোটি গ্রাহককে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশে ‘রবি’, নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে আজিয়াটা।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬
এমআইএইচ/এমএ