ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রে শিল্পপতি আফসার !

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রে শিল্পপতি আফসার ! মো.আনোয়ার শওকত আফসার

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক চোরাচালানি করে মো.আনোয়ার শওকত আফসার ধনাঢ্য শিল্পপতি বনে গেছেন বলে ধারণা করছে কাস্টমস ও পুলিশ।   সাকী শিপিং লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই আনোয়ার শওকত আফসারের আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।



শীঘ্রই কাস্টমসের টিম এ অনুসন্ধান শুরু করবে।   আর পুলিশ ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করে দিয়েছে।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আনোয়ার শওকত আফসারের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গাজিপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে সুতার বদলে বেনসন সিগারেট পাওয়ার পর আনোয়ার শওকত ও তার প্রতিষ্ঠানের অতীত কর্মকাণ্ড তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ ও কাস্টমস।

আরব আমিরাতের জেবল আলী বন্দর থেকে ‘হো চি মিন’ জাহাজে করে মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে জাহাজটি। ঢাকার গাজীপুরের এফআরসি নিট কম্পোজিট গার্মেন্টস সুতা আমদানির ঘোষণা দেয়। কিন্তু ২০ ফুটের ওই কন্টেইনারে ঘোষিত পণ্য নেই বলে র‌্যাব-৭ কে জানানো হয়।

এরপর র‌্যাব বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের উপস্থিতিতে বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে রক্ষিত কন্টেইনারটি কায়িক পরীক্ষা করেন।   এসময় ওই কন্টেইনারে সুতার বদলে ৪৭০ কার্টন বেনসন সিগারেট পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট সাকী শিপিং লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার শওকত আফসার , ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিক এবং দুই কর্মচারী নাসির ও ইমরানকে আটক করে র‌্যাব। এরপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফআর চৌধুরীসহ মোট সাতজনকে আসামী করে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বাদি হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(বি) ধারা, মানি লন্ডারিং, আমদানি-রফতানি ও কাস্টমস আইনে ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। ওই মামলায় আটক চারজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে জেলে পাঠনোর নির্দেশ দেন আদালত।   শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবদুল কাদের এ আদেশ দেন।

গ্রেফতার আনোয়ার শওকত আফসার ডাচ বাংলা চেম্বারের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানা এস আই শরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, চোরাচালাইনে আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃতরা আন্তর্জাতিক কোন চক্রের সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এছাড়া তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত সে বিষয়টিও বের করে আনার চেষ্টা থাকবে।

রোববার তাদের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার মুকিতুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত আছেন এমন সন্দেহ থেকেই সাকী শিপিং লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার শওকত আফসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।   সে কারণেই আমরা মামলা দায়ের করেছি।

মামলার তদন্ত কাজে সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা মামলার তদন্তে বের হয়ে আসবে। তদন্তের সুবিধায় অতীতে সাকী শিপিং লাইন এ ধরনের কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল কিনা তা খুঁজে বের করা হবে।

ঘটনার সঙ্গে আমদানিকারক শতভাগ জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, এফআরসি নিট কম্পোজিট গার্মেন্টস এ ঘটনার সঙ্গে পুরোপুরি জড়িত। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থপনা পরিচালকসহ তিনজনকে আসামী করা হয়েছে।

এদিকে আনোয়ার শওকত আফসারকে গ্রেফতারের পর থেকে তাকে বাঁচাতে প্রভাবশালী একটি মহল পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।