সৈয়দপুর (নীলফামারী): মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের দাম বৃদ্ধি এবং সে তুলনায় মুরগি ও ডিমের দাম না বাড়ায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে পোলট্রি শিল্পে ধস নেমেছে।
ফলে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এখানকার পোলট্রি শিল্প।
সৈয়দপুরের শহর ও গ্রাম এলাকায় কয়েক বছরে মুরগির খামারের ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এ শিল্পে লাভ হওয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অতি কষ্টে মুরগির খামার গড়ে তোলেন। এ সংখ্যা প্রায় ছয় শতাধিক।
অনেকেই নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের পাশাপাশি দেশের মুরগির মাংসের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। শিক্ষিত বেকার যুবকের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনাসহ আনাচে-কানাচে নারী এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও গড়ে তোলেন অনেক ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার।
প্রথম অবস্থায় পোলট্রি শিল্পের উপকরণের দাম কম এবং মুরগি ও ডিমের চাহিদার কারণে লাভের মুখ দেখেন সবাই। কিন্ত বর্তমানে সব ধরনের মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। যে সব খামারিরা এনজিও ও ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে পোলট্রি শিল্প গড়ে তুলেছিলেন তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে খামার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
পোলট্রি শিল্পের মালিকরা জানান, চার বছর আগে একটি লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ১৫ টাকা সেটির দাম এখন ৮৫ টাকা। একইভাবে ২০ টাকার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৭০ টাকা সোনালী জাতের বাচ্চা ১০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া ১৫ টাকা কেজির রেডিফিড ৪০ টাকা, পোলট্রি খাদ্য তৈরির উপকরণ ভুট্টা ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ২৭ টাকা হয়েছে।
সয়াবিন প্রতি কেজি ২৬ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা, মিটবোন মিল ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্রতি বস্তা প্রোটিন মাল্টিস্থির দাম ছিল ১ হাজার ৩শ’ টাকা তা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪শ’ টাকা। নিখুনাইয়ের দাম ২ হাজার ৪শ’ টাকা থেকে বেড়ে এ বছর প্রতি বস্তা ১২ হাজার ৫শ’ টাকা, লাইসিন প্রতি বস্তা ৩ হাজার টাকার থেকে বেড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ঝিনুক প্রতি বস্তা ৩শ’ টাকা থেকে বর্তমানে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে বাজারে প্রতি হালি ডিম ৩০/৩২ টাকা ও মুরগি ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খামারিরা প্রতি কেজি মুরগি ১১০/১২০ টাকায় বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে।
খামারিরা আরও জানান, প্রতিটি বাচ্চা ক্রয় করা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতি কেজি মুরগিতে খরচ পড়ে কমপক্ষে ১৪০ টাকা। কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। বর্তমান বাজারে একজন খামারিকে প্রতি কেজিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
তারা জানান, মুরগির উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা কমে গেছে। সেই সঙ্গে খামারিরা অতিরিক্ত গরমের কারণে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এতে পোলট্রি শিল্পের মালিকরা অব্যাহত লোকসানের মুখে পড়ছেন।
এছাড়া মুরগির রোগ প্রতিরোধ ও ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি ওষুধের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে রাগে ও ক্ষোভে মুরগির খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। অনেকে খামার বন্ধ করতে চাইলেও এ বিভাগে মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীরা তদারকি ও পরামর্শ দিয়ে খামারিদের লাভবান করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে খামারিরা নিজেরা মুরগির খাবার তৈরি করতে পারলে লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
আরএ/