ঢাকা: ঢাকা শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে, এমনকি অলিতে-গলিতে চোখে পড়ে থাইল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি সিপি (চ্যারন পকফান্ড) বাংলাদেশ লিমিটিডের আউটলেট।
সারাদেশে তিন শতাধিক আউটলেট রয়েছে তাদের, তবে নেই কোনো ভ্যাট নিবন্ধন! নিজেরা ভ্যাট তো দেয়ই না, বরং ফাঁকিতে সহায়তা করে নিজেদের আউটলেটগুলোকে।
অভিযোগ আছে, মূসক চালান চাইলে ভোক্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির আউটলেটগুলোতে কর্মরতরা। দেখায় না মূল্য সংযোজন কর। ২০০৮ সাল থেকে এদেশে ব্যবসা শুরু করলেও ভ্যাট আইনের আওতায় ব্যবসা পরিচালনা করে না প্রতিষ্ঠানটি।
এভাবে ভোক্তাদের অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর রাজধানীতে সিপি’র তিনটি আউটলেটে অভিযান চালায়।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সিপি’র তথ্য-উপাত্ত ও হিসাব সংক্রান্ত কাগজপত্র জব্দ করেছে। মূসক গোয়েন্দাদের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
লুৎফর রহমান নামে এক ভোক্তা সিপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, দু’দিন আগে প্রায় ৩ হাজার টাকার পণ্য কিনেছি। ভ্যাটও নিয়েছে, কিন্তু কোনো মানি রিসিট দেয়নি।
সাদ্দাম হোসেন বাপ্পি নামে আরেক ভোক্তা অভিযোগ করেন, সিপি’র আউটলেটগুলোতে খাবারের মান আগের চেয়ে বাজে হয়ে গেছে। ভ্যাট তো নেয়, কিন্তু কোনো চালান দেয় না।
সিপি’র উত্তরা আউটলেটের ক্রেতা সোলেমান বলেন, ভ্যাটসহ খাবারের দাম যেমন বেশি রাখে, ভ্যাট নেওয়ার কোনো কাগজও দেয়নি কখনো।
একজন মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সিপি যেহেতু একটি বহুজাতিক কোম্পানি। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে অভিযান চালানো ও মূসক ফাঁকি যাচাই করতে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মূসক ফাঁকির অভিযোগ করছি না। যেহেতু মূসক নিবন্ধন নেই, তাই বিপুল পরিমাণ মূসক ফাঁকি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ভ্যাট যেহেতু দেয় না, তাদের ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়ায় ধুম্রজাল ও রহস্যময়তা রয়েছে। আমরা রুই-কাতলা, চুনোপুটি, রাঘব-বোয়াল, দেশি-বিদেশি নিয়ে চিন্তা করি না। দেশকে চিরতরে ভ্যাট-কর ফাঁকিমুক্ত করার প্রত্যয় মূসক গোয়েন্দাদের।
অবশ্য ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ অস্বীকার করে সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার নাজমুল হক হিমেল বাংলানিউজকে বলেন, সিপি শতভাগ ভ্যাট দেয়। দেশের আইনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধাশীল আমরা।
সূত্র জানায়, সিপি’র রেডি টু ইট (আরটিই), রেডি টু কুক (আরটিসি) ও ফ্রেশ আইটেম খাবার আউটলেট ও ফ্রেঞ্চাইজি ছাড়াও বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেল ও বেকারিতে সরবরাহ করা হয়।
আউটলেট, ফ্রেঞ্চাইজি বিক্রি ও হোটেলে মাসে কয়েক কোটি টাকার খাবার সরবরাহ করা হলেও তারা সঠিকভাবে মূসকসহ রাজস্ব পরিশোধ করে না বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ আছে।
১৯২১ সালে থাইল্যান্ডে কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে ব্যবসা রয়েছে তাদের। ১৯৯৮ সালে কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও ব্যবসার শুরু করে ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬
আরইউ/আরএম/জেডএম