বাংলাবান্ধা থেকে ফিরে: ইমিগ্রেশন সুবিধাসহ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজস্বের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে বাংলাবান্ধা হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর।
পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হওয়ায় সার্কভুক্ত ভারত, ভুটান, নেপাল ও চীনসহ চারটি দেশের সঙ্গে সড়ক পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে খরচ এবং সময় দু’টোই সাশ্রয় হবে। এসব দেশে সড়ক পথে যোগাযোগে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হতো। কিন্তু বাংলাবান্ধা ও ফুলবাড়ী স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হওয়ায় এ পথ অনেকটাই কমেছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারতের শিলিগুড়ি শহরের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার, আর জলপাইগুড়ি মাত্র ১০ কিলোমিটার। পর্যটন এলাকা দার্জিলিং ৫৮ কিলোমিটার। এছাড়া বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাকরভিটা সীমান্তের মিচি শহর ৬১ কিলোমিটার, ভুটান ৬৮ কিলোমিটার ও চীন প্রায় ২০০ কিলোমিটার। কিন্তু বুড়িমারী বন্দর থেকে শিলিগুড়ি ৮৩ কিলোমিটার, দার্জিলিং ১৬৬ কিলোমিটারের মতো। তাই এ পথ চালু হওয়ায় দূরত্ব অনেক কমে গেল।
২০১৫ সালের জুনে ভুটানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর যোগাযোগ মন্ত্রীরা অভ্যন্তরীণ সড়ক পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে পঞ্চদেশীয় বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য। স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এসব দেশ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে খুবই অল্প খরচ হবে। এতে আমদানি-রফতানিতে ব্যবসায়ীরা কম খরচে মালামাল দেওয়া-নেওয়া করতে পারবে।
এর আগে ১৯৯৭ সালে ১ সেপ্টেম্বরে নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক এক চুক্তির মাধ্যমে ১০ একর জমির উপর নির্মিত হয় পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ২০১১ সালে ভারত ও পরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বাণিজ্যিক চুক্তি হয়।
পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি আশরাফুল আলম পাটোয়ারী এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও প্রসারিত হবে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কলকাতা, মাদ্রাজ, চীন, নেপাল, ভুটানের দূরত্ব কম হওয়ায় পর্যটন শিল্পাঞ্চল হিসেবে শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণে ইতিমধ্যেই চীনের কিছু শিল্পপতি ব্যবসায়ী কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন। যা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সচল ও অত্র এলাকার দারিদ্র ঘুচাবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাবান্ধা কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ১ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ১৮০ ইউএস ডলারের পণ্য ভারত ও নেপালে রফতানি করে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬৪ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ২ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ ইউএস ডলার পণ্য রফতানি করে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ২৬ হাজার টাকা ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬১ টাকা। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩ হাজার ৩০৫ টাকা। চলতি অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৪৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দিলেও এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
বংলাবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নাসিম বাংলানিউজকে জানান, ব্যবসা প্রসার করতে মাঝেমধ্যেই ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোতে যেতে হয়। ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হওয়ায় যাত্রী ও বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি-রফতানিতে অনেক গুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব। যা লক্ষ্যমাত্রা সহজেই পেরিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৬
এসএইচ/জেডএম