ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইউরোপে জরিমান‍া, বাংলাদেশে পরীক্ষাই হয় না জনসনের শিশুপণ্য

রহমান মাসুদ, স্পেশাল কেরসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৬
ইউরোপে জরিমান‍া, বাংলাদেশে পরীক্ষাই হয় না জনসনের শিশুপণ্য

ঢাকা: ফেব্রুয়ারির শেষে শিশু প্রসাধনী তৈরির বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনকে মোটা অংকের জরিমানা করা হলো ইউরোপের আদালতে। বাংলাদেশি টাকায় তা ৫৬২ কোটিরও বেশি।

এ ঘটনার পর বাংলাদেশের সচেতন মহলে এই কোম্পানির পণ্য পরীক্ষা ও নজরদারির জোর দাবি উঠলেও সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থাই দায়িত্ব নিতে উদ্যোগী হচ্ছে না।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইনের ফাঁক গলে বাংলাদেশে পণ্য বিপণন করছে জনসন অ্যান্ড জনসন। আর সরকারি সংস্থাগুলো একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে এ ব্যাপারে উদাসীন থাকছে।
 
বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটউট (বিএসটিআই) যে সব পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সেগুলোর মধ্যে শিশুপণ্য নেই। এমন কি বিএসটিআই নাকি আমদানি হওয়া কোন শিশু প্রসাধনীর মান পরীক্ষাও করে না। এ ধরনের পণ্যের কোন নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ডও নাকি নেই বিএসটিআই এর।
 
সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল হক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, দেশে যেহেতু এ ধরনের পণ্যের কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই এবং বিএসটিআই’র পরীক্ষা করারও বাধ্যবাধকতা নেই, তাই আমরা এ বিষয়ে নজরদারি করি না। আমরা ইউরোপে জনসনকে জরিম‍ানার বিষয়টি পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু কোন কমপ্লেইন না পেলে আমরা এটা পরীক্ষা করতে পারি না।
 
তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের পণ্য আমদানির বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
 
কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি (আমদানি) নাজনীন বেগম বাংলানিউজকে জানান, ইউরোপের বাজারে জনসনের জরিমানা হওয়ার খবর শোনেননি তিনি।

নাজনীন বেগম বলেন, দেশে একটি আমদানি নীতিমালা আছে। সে অনুযায়ী সকল পণ্য আমদানি হয়। এরপর এটা দেখা আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না। বিএসটিআই এটা পরীক্ষা করবে।
 
তিনি বলেন, কোন পণ্যের মান সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার বা তদারকির কাজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের না। তবে কোন আমদানি করা পণ্য সম্পর্কে আগে থেকে কোন গোয়েন্দা তথ্য পেলে আমরা তা দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থাকে বলি। তখন তারা বন্দরেই ব্যবস্থা নেন। তবে আমদানি পণ্য বন্দরে নিয়মিত পরীক্ষা হয় কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।
 
এজন্য ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দায় আছে বলে দাবি করেন নাজনীন বেগম।

তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ এলেই আমরা বিষযটি নিয়ে সুযোমোটো জারি করতে পারি। মন্ত্রণালয় অভিযোগ না পেলে যেচে কিছু করতে পারে না।
 
নাজনীন বেগম বলেন, প্রতিটি দূতাবাসে একজন করে বিজনেস কাউন্সিলর আছেন, তারা এখনো জনসনের পণ্যের মান ঠিক আছে কিনা পরীক্ষার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কিছু জানায়নি।
 
তার এমন বক্তব্য অবশ্য উড়িয়ে দেন ক্যাব প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ক্যাব তো সরকারি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান না। আমাদের তো তেমন ক্ষমতাও নেই। এটা সরকারেরই নজরদারি করা উচিত। আমরা কেবল জনগণকে সতর্ক ও সচেতন করি।
 
বিএসটিআই তো বেশিরভাগ পণ্যেরই মান পরীক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে শিশু পণ্য বাদ যাবে কেনো- প্রশ্ন তোলেন গোলাম রহমান।
 
সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের দড়ি টানাটানি, আইনের ফাঁক আর কর্তব্য সম্পর্কে অন্ধকারে থাকার প্রবণতা ‍ও দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছে বাংলাদেশের বাজারে জনসন অ্যান্ড জনসন’র পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের বাজারে তাদের পণ্যের মান যাচাইয়ের সুযোগ নেই। নেই কোন তদারকিও। কেবল এই কোম্পানিটিই নয়, দেশের বাজারে বিপণন হওয়া কোন শিশু পণ্যেরই নাই কোন তদারকি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
আরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।