ঢাকা: ভারত থেকে আরো দুই বিলিয়ন ডলার (২০০ কোটি ডলার) নমনীয় ঋণ (এলওসি) পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)।
অবকাঠামো বিশেষ করে রেল, বিদ্যুত ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ এ অর্থ ব্যবহার করতে পারবে।
এসব কাজ বাস্তবায়নে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে তাতে অন্তত ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।
এ শর্তে বুধবার (০৯ মার্চ) বিকেল তিনটায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।
ইআরডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি’র সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন এবং ভারত সরকারের পক্ষে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’র চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদুভেন্দ্র মাথুর চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।
ঋণচুক্তি প্রসঙ্গে ইআরডি’র সহকারী প্রধান রায়হান কবির বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এসে কমিটমেন্ট করে গিয়েছিলেন, আমাদের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবেন। সেটা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বুধবার। আগে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল ভারত। ঋণের সুদের হার ও শর্ত চলমান ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের মতোই হবে। সে হিসেবে নতুন ঋণের সুদহার হবে ১ শতাংশ।
ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতের অনেক প্রকল্পের প্রস্তাবনা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) জমা পড়েছে। এর আগে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চাহিদা ও গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে প্রকল্প তৈরি করতে বলেছিল ইআরডি। এর প্রেক্ষিতেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা জমা পড়তে শুরু করেছে ইআরডি’তে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০০ কোটি ডলার সর্বমোট ২৫ থেকে ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। পরে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঋণে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তা চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০ বছরের মধ্যে ভারতকে এ ঋণ শোধ করতে হবে। এতে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তবে প্রথম পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কিস্তি পরিশোধ করা লাগবে না।
এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে অনুদান ছিল ২০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ৮০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ৭০ কোটি ডলারই রেলখাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। মোট ঋণে বাংলাদেশে ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্পই রেল সংক্রান্ত।
ইআরডি সূত্র জানায়, এর মধ্যে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো- ৩০০টি ডেকার, ডাবল ডেকার এসি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় প্রকল্প, ৮১টি বগি ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, ১০ লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্প, ১৬৫ ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, প্রকিউরমেন্ট অব ১৬ লোকোমোটিভ প্রকল্প, ১৭০টি ফ্ল্যাট ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, ৫০টি এমজি ফ্ল্যাট ওয়াগন ও ৫টি এমজি ভ্যান এয়ার ব্রেক কনটেইনার সংগ্রহ প্রকল্প।
সাতটি চলমান প্রকল্প হচ্ছে- খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, নৌ-মন্ত্রণালয়ের আওতায় মংলা পোর্টে প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় প্রকল্প, ১২০টি বিজি কোচ সংগ্রহ প্রকল্প, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প, বিএসটিআইকে আধুনিক ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ঢাকা-টঙ্গি রুটে তৃতীয় এবং চতুর্থ ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প এবং ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।
এ সাতটি প্রকল্প আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর