ঢাকা: বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্সের পাশাপাশি একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
কর আইন বিষয়ে জানাতে বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে ডেস্ক ও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের বিষয়ে একটি গাইডলাইনও (নীতিমালা) তৈরি করা হচ্ছে।
রাজনৈতিকসহ সকল বিতর্ক এড়াতে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের মাধ্যমে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এ কমিটি হয়ে যাবে।
এনবিআরের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিদেশি নাগরিকরা কর্মরত রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই কর ফাঁকি দিচ্ছেন- এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এসব নাগরিকদের করের আওতায় আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সঠিক তথ্য না থাকায় তাদেরকে এখনো করের আওতায় আনতে পারেনি।
এ নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এনবিআর সম্মেলন কক্ষে সভাও হয়েছে। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় দেশের অভ্যন্তরে কর্মরত যেসব বিদেশি নাগরিক কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে বিদেশি নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডার সমন্বিত ডাটা ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে আসা সব বিদেশি নাগরিকের তথ্য থাকবে।
টাস্কফোর্স কর ফাঁকি দেওয়া বিদেশিদের ধরতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানে অভিযান, সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
ইতোমধ্যে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কর্মরত নাগরিকের সংখ্যা, দেশ, বেতন, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার সময়সহ বিস্তারিত জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে এনবিআর।
চিঠি পেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজও শুরু করেছে। সহসাই তারা তথ্য এনবিআরে পাঠাবে। এর মাধ্যমে কর ফাঁকিবাজ অবৈধ বিদেশিদের সংখ্যা বের হয়ে আসবে।
সূত্র আরো জানায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দেশের সব কর অঞ্চলের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের তথ্য পাঠাতে নির্দেশ দেয় এনবিআর।
নির্দেশনা অনুযায়ী কর অঞ্চলের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যেসব বিদেশি নাগরিক রিটার্ন দাখিল ও আয়কর পরিশোধ করেন, তাদের তথ্য পাঠানো শুরু করেছে।
আগামী কিছুদিনের মধ্যে সব কর অঞ্চলের তথ্য চলে আসবে। এর মাধ্যমে কি পরিমাণ বিদেশি নাগরিক কর পরিশোধ করেন তার তথ্যও জানা যাবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ০১ মার্চ এনবিআর সম্মেলন কক্ষে বিদেশি নাগরিক ও তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রযোজ্য কর, জরিমানা বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনা ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ‘সমন্বিত টাস্কফোর্স’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বলা হয়, দেশে প্রকৌশল, চিকিৎসা, গার্মেন্টস, মার্চেন্ডাইজিং, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প-কলকারখানাসহ বিভিন্ন খাতে বিদেশি নাগরিকরা কাজ করছেন।
অবৈধভাবে অনেক বিদেশি নাগরিক দেশে কাজ করছেন ও অনেকে স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করে বিপুল পারিতোষিক গ্রহণ করে আয়কর প্রদান না করেই দেশ ত্যাগ করেন।
বৈধ ও অবৈধ উভয় নাগরিক ও তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আয়কর কার্যক্রম মনিটরিং অত্যন্ত জরুরি বলে সভায় আলোচনা করা হয়।
বিনিয়োগ বোর্ড, বেপজা, এনজিও ব্যুরো, এনএসআই, এসবি, পাসপোর্ট ও বহির্গমন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি’র কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কাজ করবে টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্স ও স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এনবিআর। কমিটি গঠিত হলে সহসাই কাজ শুরু করা হবে।
কর অঞ্চল, টাস্কফোর্স ও কমিটির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী একটি ডাটা ব্যাংক তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু করেছে এনবিআর।
সেসব তথ্য ব্যাংকে সব বিদেশি নাগরিকদের তথ্য থাকবে। কোনো বিদেশি নাগরিক কখন, কোথায়, কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, কি পরিমাণ কর দিচ্ছেন সব তথ্য থাকবে এ ব্যাংকে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এ ব্যাংকের সঙ্গে লিংক থাকবে। যাতে তারা সহজে এসব তথ্য পেতে পারে। এর মাধ্যমে কোনো বিদেশি নাগরিকের কর ফাঁকির সুযোগ থাকবে না।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে কোনো গাইডলাইন (নীতিমালা) না থাকায় অনেকেই কর ফাঁকি দিয়ে থাকছেন বছরের পর বছর।
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি গাইডলাইন তৈরির কাজ শুরু করেছে এনবিআর। সে অনুযায়ী কোনো বিদেশি নাগরিককে দেশ ত্যাগের আগে আয়কর সনদ দেখাতে হবে।
সেজন্য বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আয়কর ডেস্ক স্থাপন করা হবে। ডেস্কের কর্মকর্তারা বিদেশিদের সনদ যাচাই ও কর আইন সম্পর্কে বিদেশি নাগরিকদের অবহিত করবে।
দেশের প্রধান দু’টি বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ শুল্ক স্টেশনে এ ডেস্ক স্থাপনের কাজ শুরু করেছে এনবিআর। সহসাই এ ডেস্ক স্থাপন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
সহসাই টাস্কফোর্স ও স্টিয়ারিং কমিটি হয়ে যাবে বলে বাংলানিউজকে জানান এনবিআরের সদস্য (ট্যাক্স লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) ড. মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সহযোগিতায় আমরা একটি গাইডলাইন তৈরি করছি। যাতে বিদেশিদের বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ডাটা ব্যাংক করতে কর অঞ্চলসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে তথ্যের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কর অঞ্চলের কিছু তথ্য এলেও সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে আসেনি।
আমাদের কাছে সঠিক সংখ্যাও নেই। আগামী এক বছরের মধ্যে ডাটা ব্যাংক হয়ে যাবে। এরপর কোনো অবৈধ বিদেশি নাগরিক কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।
কমিটি অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে করা হবে, যাতে কমিটি নিয়ে রাজনৈতিকসহ কোনো মহলের বিতর্ক না থাকে- যোগ করেন এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
আরইউ/এএসআর
** বিদেশিদের আয়করের আওতায় আনতে সমন্বিত টাস্কফোর্স
** বিদেশিদের কর ফাঁকি রোধে হচ্ছে টাস্কফোর্স ও ডাটা ব্যাংক