ঢাকা: ২০১০ সালে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার (এক বিলিয়ন) ঋণ দিয়েছিলো ভারত। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
এক সঙ্গে এতো বড় অনুদান এর আগে কোনো উন্নয়ন সহযোগী দেয়নি। প্রথম ঋণের আওতায় ১৫টি প্রকল্পের সবগুলোতেই ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়া গেছে। মোট ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি ইতিমধেই সম্পন্ন হয়েছে, বাকি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নাধীন আছে।
বুধবার (৯ মার্চ) ভারত থেকে আরো দুই বিলিয়ন ডলার (২০০ কোটি ডলার) নমনীয় ঋণ (এলওসি) পেলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাতে, বিশেষ করে- রেল, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, সড়ক পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নৌ-পরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ এ অর্থ ব্যবহার করতে পারবে। তবে এসব কাজ বাস্তবায়নে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে তাতে অন্তত ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।
বুধবার বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে এ সংক্রান্ত ঋণচুক্তি সই হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
এর মধ্যে ৫০০টি ট্রাক কিনতে ৩ দশমিক ৫৩ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণ ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ডাবল ডেকার ও আর্টিকুলেটেড বাস কিনতে ৪ দশমিক ৩১ লাখ ডলার, প্রকিউরমেন্ট অব ইকুইপমেন্টস অ্যান্ড মেশিনারিজ ফর রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে প্রকল্পে ৪ দশমিক ৯৪ কোটি ডলার, হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন আইসিটি প্রকল্পে ১ কোটি ডলার, ১২টি জেলা পর্যায়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণে ১৯ দশমিক ৩ কোটি ডলার, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া ও কালিয়াকৈরে ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২১ কোটি ডলার ব্যবহার করা হবে।
খুলনা-দর্শনা (চুয়াডাঙ্গা) ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণে ৩০ কোটি ডলার, সৈয়দপুরে ওয়ার্কশপ উন্নয়নে ৮ দশমিক ৫ কোটি ডলার, আশুগঞ্জ নদীবন্দর হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২২ দশমিক ৯ কোটি ডলার, আশুগঞ্জ নদীবন্দর উন্নয়নে ৩ দশমিক ৩ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণ ব্যবহার করা হবে।
এ ঋণ থেকে দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও দু’টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উন্নয়নে ১৮ দশমিক ১ কোটি ডলার, চারটি মেডিকেল কলেজ ও একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের আধুনিকায়নে ২৫ কোটি ডলার, এস্টাবলিসমেন্ট অব ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক জোন ইন মংলা অ্যান্ড ভেড়ামারা প্রকল্পে ৮ দশমিক ৮ কোটি ডলার ব্যবহার করা হবে।
১৪টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৩৭ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ থেকে আসবে ১৯১ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার। বাকি ৫৪ দশমিক ৭৮ মার্কিন ডলার দেশি অর্থায়ন থেকে মেটানো হবে।
এ প্রসঙ্গে ইআরডি’র সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নতুন করে ভারতের সঙ্গে যে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি হয়েছে, এই অর্থ দিয়ে ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে করে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। এটা আমাদের কাছে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো।
প্রকল্পের আওতায় ভারতীয় পরামর্শক থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নিজস্ব অর্থ খরচ করে পরামর্শক রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে উভয় দেশ স্বাধীন।
নতুন ঋণে অনুদান প্রসঙ্গে এই সিনিয়র সচিব বলেন, আগের ঋণে ২০ কোটি ডলার অনুদান থাকলে নতুন ঋণে কোনো অনুদান নেই। তবে আরও কিছু প্রকল্পে ভারত ঋণ দিতে আগ্রহী। সেই সব প্রকল্পে অনুদান থাকবে।
এর আগে বাংলাদেশে সফরে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা এই চুক্তি সইয়ের মধ্যদিয়ে বাস্তবায়িত হলো। এর আগে ২০১০ সালে মনমোহন সিং সরকার এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিলো বাংলাদেশকে। ঋণের সুদের হার ও শর্ত চলমান ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের মতোই হবে। সে হিসেবে নতুন ঋণের সুদহারও হবে ১ শতাংশ। এ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছর।
২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এতে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তবে প্রথম পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না।
এর আগে ২০১০ সালে দেওয়া ঋণের মধ্যে ৭০ কোটি ডলারই রেলখাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। এ ঋণে বাংলাদেশে মোট ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্পই রেল সংক্রান্ত।
ইআরডি সূত্র জানায়, এর মধ্যে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো- ৩০০টি ডেকার, ডাবল ডেকার এসি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় প্রকল্প; ৮১টি বগি ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প; ১০ লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্প; ১৬৫ ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প; প্রকিউরমেন্ট অব ১৬ লোকোমোটিভ প্রকল্প; ১৭০টি ফ্ল্যাট ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প; ৫০টি এমজি ফ্ল্যাট ওয়াগন ও ৫টি এমজি ভ্যান এয়ার ব্রেক কনটেইনার সংগ্রহ প্রকল্প।
সাতটি চলমান প্রকল্প হচ্ছে- খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প; নৌ-মন্ত্রণালয়ের আওতায় মংলা পোর্টে প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় প্রকল্প; ১২০টি বিজি কোচ সংগ্রহ প্রকল্প; কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প; বিএসটিআই’কে আধুনিক ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প; ঢাকা-টঙ্গী রুটে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প; ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। এ সাতটি প্রকল্প আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
২০১০ সালে এক বিলিয়ন ও ২০১৬ সালে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিলো ভারত। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। যে অর্থে আশার আলো দেখতে যাচ্ছে দেশের ২৯টি প্রকল্প। ইতিমধ্যে এর ১৫টি প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঐতিহাসিক নতুন ঋণচুক্তির ফলে আলোর মুখ দেখবে আরও ১৪ প্রকল্প।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
এমআইএস/আরএম