ঢাকা: গুণগত সবজি বীজের জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যেগে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর জোর দেন তারা।
শনিবার (১২ মার্চ) ডেইলি স্টার মিলনায়তনে গোলটেবিল আলোচনায় এ দাবি জানানো হয়। ‘কোয়ালিটি ভেজিটেবল সিড প্রোডাকশন এন্ড সার্টিফিকেশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকটির যৌথভাবে আয়োজন করে ডেইলি স্টার, ক্যাটালিস্ট এবং সমষ্টি।
ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক শাহনুর ওয়াহিদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে ছিলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. তৌহিদুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান সিড টেকনোলজিস্ট মো. আজিম উদ্দিন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, লাল তীর সিড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব আনাম, ব্র্যাকের সুধির নাথ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, টেকসই ফসল উৎপাদনে বীজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে ১৫-২০ শতাংশ কোয়ালিটি বীজ উৎপাদনের সক্ষতা রয়েছে। এ পরিসংখ্যান সবজি বীজ সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এফএও’র তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ গত শতাব্দীতে সবজি বীজের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। গত তিন বছরে আমাদের দেশে সবজির উৎপাদন হয়েছে ৬ শতাংশ। প্রায় ৬০ ধরনের সবজির ৩০০ জাত আমাদের দেশে উৎপাদন হয়েছে।
সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, সবজি বীজের জন্য সরকারি ‘নোটিফিকেশন’ (প্রজ্ঞাপন) প্রয়োজন নেই। সবজি বীজ নিয়ে আমাদের এখানে কোনো জটিলতা নেই। তাই সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে হাত-পা বেঁধে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বরং যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলুক। তবে ভালো বীজের জন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা যেতে পারে। সরকার ব্যবসা করতে চায় না।
ভেজাল বীজ রোধে সরকারের কার্যক্রম সেভাবে নেই বলে উল্লেখ করে সাবেক এই সচিব বলেন, আমরা বীজে ভেজাল রোধ সঠিকভাবে মনিটর করতে পারি না। কোনো প্রতিষ্ঠানের বীজে ভেজাল পাওয়া গেলে তাদের জেল-জরিমানা করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তাই এখানে কিছুটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সবজি বীজের জন্য আরো বেশি গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকেও উদ্যেগী হওয়ার আহ্বান জানান আনোয়ার ফারুক।
ব্রি এর মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, আমরা চাইলেও সব সবজি বীজ উৎপাদন করতে পারি না। তাই আমদানি করতে হয়। কৃষক যাতে ভালো বীজ পান, সেদিকে সকল বেসরকারি সংস্থাকে সজাগ থাকতে হবে।
বিএআরআই’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, সবজি বীজের ভেজাল রোধে প্রয়োজন কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা। এখানে নোটিফিকেশন করে লাভ নেই।
লাল তীর সিড লিমিটেডের এমডি মাহবুব আনাম বলেন, যারা বীজ ব্যবসা করেন, তাদের এই ব্যবসাটাকে ধার্মিকভাবেই নিতে হবে। এখানে খারাপ বীজ বাজারে ছেড়ে কেউ টিকে থাকতে পারেন না, পারবেনও না, তাদের চলে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যে বীজ উৎপাদন করি, সেগুলোর সার্টিফিকেশন না থাকায় রফতানি করতে পারি না। তাই সার্টিফিকেশন খুব প্রয়োজন। সরকারিভাবে যদি বীজের গুণগত মানের সনদ দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকারিভাবে সবজি বীজ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন নেই। সবজি বীজ বেসরকারিভাবে উৎপাদনের সুযোগ রাখার প্রয়োজন রয়েছে। তবে সবার আগে কৃষকের হাতে ভালো মানের বীজ সরবরাহ করার চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এসএম/এএসআর