ঢাকা: সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও ওঠা-নামা করছে পাইকারি ও খোলা বাজারে। তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য মিল মালিকদের দোষারোপ করছেন পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রকরা।
শনিবার (১২ মার্চ) পাইকারি ও একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েক সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে সকল ধরনের ভোজ্যতেল লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা কম দামে বিক্রি করার ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণা প্রথম সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা পালন করলেও পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছে মত খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, খোলা সয়াবিন তেল (এক নম্বর) ৮৪ টাকা কেজি, লিটার ৭৬ টাকা। সয়াবিন(সুপার)কেজি ৬১-৬২ টাকা, লিটার ৫৭ টাকা। পামঅয়েল কেজি ৫৯-৬০ টাকা, লিটার ৫২ টাকা।
আর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯২ টাকায়, সয়াবিন(সুপার)৭০ থেকে ৭২ টাকা, আর পামঅয়েল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায়।
ভোজ্যতেলের দাম পাঁচ টাকা কমে বিক্রির ঘোষণার পরে খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে- সয়াবিন তেল (এক নম্বর) ৮৫ থেকে ৮৮ টাকায়, সয়াবিন (সুপার) ৬২ থেকে ৬৬ টাকা, আর পামঅয়েল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়।
সরকার ঘোষিত পাঁচ টাকা কমে ভোজ্যতেল বিক্রি করার কথা এখনো চলমান রয়েছে। কিন্তু এরপরও বাজারে তেলের দাম বাড়তি। কি জন্য বাড়তি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ তেল মালিক সমিতির সদস্য ও কারওয়ানবাজার ইসলামিয়া শান্তি বাজার সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামের থেকে আমরা কেউ বেশি দামে তেল বিক্রি করি না’।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বোতলজাত তেলের চেয়ে ৪০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল। আর বোতলজাত তেলের থেকে প্রতি লিটার আট টাকা কমে বিক্রি করি। কিন্তু সরকার কমিয়েছে পাঁচ টাকা’।
‘সয়াবিন তেলের মিলে তেল কিনতে গেলে দুই থেকে তিনদিন সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হয় ট্রাক। আর প্রতিদিনের জন্য ভাড়া গুণতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের খরচ থাকে। যে কারণে লিটারপ্রতি এক বা দুই টাকা তেলের দাম বেড়ে যায়। তবে খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা ১০ টাকার ওপর দাম বাড়িয়ে দেন’।
‘দীর্ঘদিন ধরে তেলের ব্যবসা করছেন এই সিরিয়াল সমস্যার সমাধান কেন করতে পারছেন না?’ জবাবে এই ব্যবসায়ী সরকার ও মিল মালিকদের সহানুভূতি কামনা করেন।
এদিকে বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল- রূপচাঁদা ৪৫০ টাকা, ফ্রেস ৪৩০ টাকা, ভিওলা ৪৩০ টাকা, পুষ্টি ৪৩০ টাকা ও তীর ৪৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ভোজ্যতেলের দাম বর্তমানে বিশ্ব বাজারে সবচেয়ে কম। অপরিশোধিত সয়াবিন পরিশোধন করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিতে খরচ পড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা।
এমন তথ্যের জবাবে বাংলাদেশ তেল মালিক সমিতির সদস্য আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ৫০ পয়সা খরচ ও ৫০ পয়সা লাভ করে ছিদ্দিক গ্রুপ তেল বিক্রি করে।
কারওয়ানবাজার পাইকারি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ ও বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজ।
এদিকে পামঅয়েলকে একধাপ পরিশোধন করে তৈরি করা হয় সয়াবিন তেল সুপার এমনটি জানান ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সুমন হালদার।
তিনি জানান, বোতলের সয়াবিন তেল ও এক নম্বর খোলা সয়াবিন তেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বোতলজাত করার জন্যই প্রায় ৪০ টাকা বেশি দাম রাখা হয় ব্র্যান্ডের তেলের দাম।
বোতলজাত তেলের হাতল তৈরিতে খরচ হয় আট টাকা, বোতল তৈরিতে ১৮ টাকা, কার্টন ৩৮ টাকা, এরপর রয়েছে ডিলারদের কমিশন ও বিজ্ঞাপন খরচ।
তবে খোলা সয়াবিন তেলের চেয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৫ শতাংশ বেশি নিতে পারবে বলে সরকারের ঘোষণা রয়েছে। আর বোতলাজাত সয়াবিন তেল কোম্পানিগুলো সেই মাফিক দাম নির্ধারণ করে বাজারজাত করে বলেও জানান সুমন।
এদিকে খোলা বাজারে চার থেকে পাঁচ কোম্পানির তেল বেশি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের। তার কারণ, এ কোম্পানির তেলের বোতল তৈরিতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এফবি/এএসআর