রংপুর: রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (আরসিসিআই) আয়োজনে ‘ভ্যাট আইন সহজীকরণ ও পরিধি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক রাজস্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রংপুর চেম্বার ভবনের আরসিসিআই অডিটোরিয়াম হলরুমে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
রংপুর চেম্বারের সভাপতি মো. আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের কমিশনার মোহাম্মদ আহসানুল হক।
সংলাপ অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনকে আরও বোধগম্য ও সহজীকরণ করার পাশাপাশি স্লাবভিত্তিক ভ্যাট আদায়ের প্রক্রিয়া রহিত করে প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার দাবি জানান। তাছাড়া ব্যবসায়ী নেতারা নতুন ভ্যাট আইনে সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন হারে ভ্যাট আরোপের দাবি করার পাশাপাশি নতুন নতুন ভ্যাটদাতা চিহ্নিত করে ভ্যাটের পরিধি সম্প্রসারণের আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে ইচ্ছুক, তবে ভ্যাট বা ট্যাক্স যাতে ব্যবসায়ীদের সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হোক- এটাই ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা। তাই দেশের উন্নয়নে আমাদের সকলের ভ্যাট দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদেরকে অযৌক্তিকভাবে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে তা মানতে আমাদের কষ্ট হবে।
তিনি ব্যবসায়ীদেরকে ভয়-ভীতি ও অহেতুক হয়রানি না করে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে ভ্যাট কর্মকর্তাদেরকে ভ্যাট আদায়ের আহ্বান জানান।
নতুন ভ্যাট আইন বিষয়ে চেম্বার সভাপতি বলেন, নতুন আইন কেবলমাত্র প্রণয়ন নয়, মানুষকে ভ্যাট বা কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের কমিশনার মোহাম্মদ আহসানুল হক চেম্বার নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন যে, ব্যবসায়ীরা অনলাইনের মাধ্যমে জটিলতা ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে নিজের ভ্যাট নিজেই প্রদান করতে পারবেন। এতে ভ্যাটদাতার ব্যবসা পরিচালনা খরচ অনেকাংশে হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা অনাকাঙ্খিত বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাবেন।
তিনি বলেন, ভ্যাটের পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রত্যেক মেট্রোপলিটন, জেলা শহর এবং উপজেলায় ভ্যাট কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সঠিকভাবে ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকে ভ্যাটের আওতায় আনার উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে তা সম্প্রসারিত হবে।
তিনি অনলাইনে ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের পক্ষ থেকে সভা, সেমিনার, ইন্টারনেট, ই-পোর্টাল, সেলফোন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভ্যাটদাতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলেও ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বাস প্রদান করেন।
রাজস্ব সংলাপ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের যুগ্ম কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ, সহকারী কমিশনার মো. পারভেজ রেজা চৌধুরী।
সংলাপে ব্যবসায়ী নেতাদের পক্ষেবক্তব্য রাখেন চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি মোস্তফা আহমেদ, সহ সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক ডাম্বেল, এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ সভাপতি ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, ভিন্নজগৎ লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী এস এম কামাল, পরিবেশক সমিতির সহ সভাপতি শেখ মিননুর রহমান, চেম্বারের সাবেক জুনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রংপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মোঃ জুন্নুন, সনিক-প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. আক্কাছ আলী সরকার, যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ভরসা, মাহিগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আজিজ উল্লাহ, প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন মিয়া, রংপুর জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুলতান মাহমুদ শাহীন, রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ খান, বাংলাদেশ হোটেল রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ খোকন প্রমুখ।
রংপুর চেম্বারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা ও পরিচালক, রংপুর উইমেন চেম্বারের কর্মকর্তা ও পরিচালক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতাসহ রংপুরের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা সংলাপে অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
এএসআর