ঢাকা: ঋণে জর্জরিত জ্বালানি খাতের কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড নতুন করে প্রবল অর্থ সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ধর্ণাও দিয়েছে তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণে জর্জরিত কোম্পানিটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো যেকোনো উপায়ে একবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া। এরপরের বছরেই লোকসানে পরিণত হয়ে যাবে কোম্পানি। তখন বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিয়ে রাইট ও বোনাস শেয়ারের নামে তাদের কাছ থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এর ফলে এই ঋণগ্রস্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৮২ কোটি ৭০ লাখ ৪১ হাজার ২১৫ টাকা। তার আগের বছরের ঠিক একইসময়ে এ ঋণ ছিল ৩৭৬ কোটি ৫৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৮ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এনার্জিপ্যাকের ঋণ বেড়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। এই ঋণগ্রস্ত কোম্পানিটিকে যেকোনো উপায়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। প্রথম দুই দফায় চেষ্টা করে টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে কর্তৃপক্ষ এখন নতুন করে তৃতীয় দফায় আবেদন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য সব ধরনের চেষ্টা ও তদবির করা হচ্ছে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ সিকউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৪৮ টাকা দামে ৪ কোটি ৫৪ লাখ শেয়ার ছেড়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে) মাধ্যমে বাজার থেকে ২১৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা তুলতে চায়। কিন্তু কোম্পানির কারখানায় জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় ওই প্রস্তাব বাতিল করে বিএসইসি।
এরপর দ্বিতীয় দফায় কমিশনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ লাখ ২০০ শেয়ার ছেড়ে ৩৪ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ৪৪ টাকায় ৭৩ কোটি ৬১ লাখ ২৮ হাজার ৮শ’ টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে কমিশন চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আইপিও’র মাধ্যমে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৫ টাকা দামে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটিকে বাজার থেকে ৪১ কোটি ৮২ লাখ টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেয়।
কিন্তু তার আগেই অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে বিএসইসির ‘পাবলিক ইস্যু রুলস, ২০০৬’ এ সংশোধনী আসে। সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এরমধ্যে প্রধান পরিবর্তনটি হচ্ছে, ফিক্সড প্রাইস মেথডে প্রস্তাবিত দর প্রিমিয়ামে কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন না করা। কোনো কোম্পানি আইপিওতে প্রিমিয়াম চাইলে সেটিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসতে হবে। ৫ জানুয়ারির আগে অর্থাৎ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধনীর গেজেটটি প্রকাশ করে বিজি প্রেস।
আর যেদিন দুপুরে কোম্পানিটিকে টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয় সেদিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি বিকেলেই গেজেটটি বিএসইসির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়। ফলে নিজের করা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে বিএসইসির বিরুদ্ধে। সমালোচনার মুখে বিএসইসি প্রথমে এনার্জিপ্যাকের আইপিওটি পর্যালোচনার কথা জানায়। পরে সেটি বাতিলই করে দেয়।
এ কারণে আবেদন করে চাঁদার মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে আগামী ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব ধরে তৃতীয় দফায় নতুন করে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কোম্পানিটি। এজন্য সরকারের ওপরের মহলের পাশাপাশি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসিতে ব্যাপক তদবির চালাচ্ছে এনার্জিপ্যাক কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন রশিদ ফোন ধরেননি। এরপর এসএসএম পাঠানো হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। তার আগে কোম্পানির প্রধান ফাইন্যান্সিয়াল অফিসারের (সিএফও) সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের আগে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর বিষয়টি নিয়ে এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সব শর্ত পূরণ হওয়ায় কোম্পানিটিকে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু নতুন আইন জারি হওয়ায় কোম্পানিটির আইপিও বাতিল করা হয়েছে।
এনার্জিপ্যাকের ভবিষ্যৎ সর্ম্পকে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঋণগ্রস্ত কোম্পানির ভবিষ্যৎ খুবই খারাপ। বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রথম বছর ভালো লভ্যাংশ দিয়ে পরের বছর থেকে লোকসান দেখাতে শুরু করে। এরপর রাইট শেয়ারের নামে আবারও শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিয়ে তুলে নিয়ে যায়।
তাই এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না করতে বিএসইসির প্রতি আহবানও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
এমএফআই/এইচএ/