ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যর্থ কাপড় ব্যবসায়ী মতি মাছ চাষে সফল

মাসুক হৃদয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
ব্যর্থ কাপড় ব্যবসায়ী মতি মাছ চাষে সফল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাঁচদোনা (নরসিংদী) থেকে ফিরে: নাটক সিনেমাতে জিরো থেকে হিরো হয়ে ওঠার গল্প সমসময় দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবে এ ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীর পাঁচদোনা উপজেলায়। আর এ ঘটনার নায়ক হলেন পাঁচদোনার মতিউর রহমান (৪০)।

মাছের খামার গড়ে তুলে তিনি এখন কোটিপতি। মাছ চাষে অবদানের কারণে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পেয়েছেন রৌপ্য পদক।  

রৌপ্যপদক পাওয়া মতিউর নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নের শ্রীনগর পাঁচবাগ গ্রামের মো. জহর আলীর ছেলে।  

মতিউর বাংলানিউজকে জানায়, ১৯৯০ সালে এসএসসি পাশের পর আর পড়াশোনা এগোয়নি তার। পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে বাড়ি থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট বাবুরহাটে শুরু করেন শাড়ির পাইকারি ব্যবসা। টানা সাত বছর (২০০১) কাপড়ের ব্যবসা করেন। এ সময়ের মধ্যে পাইকাররা বাকিতে নেওয়া কাপড়ের টাকা পরিশোধ না করায় ব্যবসায় প্রচুর লোকসান হয়।  

কাপড়ের ব্যবসা বাদ দিয়ে ২০০২ সালের দিকে শুরু করেন পরিবহন ব্যবসা। ঢাকা-নরসিংদী পথে চালু করেন ‘মায়ের দোয়া রবিনহুড’ ‌‌‌নামের বাস সার্ভিস। ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে এ ব্যবসাও টেকেনি। গাড়ি বিক্রি করে দিয়ে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় হতাশা আর পিছুটানে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েন মতিউর।  
 
কিন্তু দমে যাননি তিনি। বেকারত্ব ঘোচাতে নিজের ৯০ শতক জমিতে পুকুর কেটে সেখানে মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একসময়ের ‘বেকার যুবক’ মতিউর এখন ১৯টি পুকুর ও একটি ফিস ফিডের মালিক। মাছ ও মাছের খাদ্য মিলিয়ে প্রতিমাসে কোটি টাকারও বেশি আয় হয় তার।  
 
সম্প্রতি পাঁচদোনার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন মেহেরপাড়ার কালিবাড়ির কাছে সরেজমিন গিয়ে মতিউর রহমানের প্রকল্প ঘুরে দেখা হয়। সেখানে বিশাল এলাকাজুড়ে ১৩টি পুকুর নিয়ে তার এ প্রকল্প। এছাড়া পাঁচদোনার ভাটপাড়া স্কুলের পাশে রয়েছে ছয়টি পুকুর নিয়ে অপর একটি প্রকল্প।  
 
তার পুকুরে শিং, কৈ, মাগুর, পাবদা ও গুলশা জাতের মাছ চাষ করা হয়। গুলশা মাছের একক চাষ ছিল তার পদক প্রাপ্তির ক্ষেত্র। আর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ির বিপরীতে রয়েছে তার মালিকানাধীন ‘ভাই ভাই ফিস ফিড’।
 
মতিউর বাংলানিউজকে জানান, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধলা গ্রামের ডলফিন হ্যাচারির মালিক রাজ্জাক মিয়া তার প্রথম অনুপ্রেরণা। রাজ্জাক মিয়াই তাকে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রথমে বিভিন্ন মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করেন। এরপর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় দিন দিন পুকুরের সংখ্যা আরো বাড়াতে থাকেন।  

নিজেকে অনেক সুখী মানুষ মনে করেন মতিউর। সফলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ছোট ভাইকে ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে পাঠিয়েছি। গ্রামের বাড়িতে সুন্দর একটি পাকা বাড়ি করেছি। একটি প্রাইভেটকার কিনেছি, মালামাল পরিবহনের জন্য দু’টি লেগুনা কিনেছি। সবগুলোই আমার মাছ ব্যবসার সফলতা।   
  
নরসিংদী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বাংলানিউজকে জানান, মতিউর রহমান ২০১৫ সালে ০.৪৮ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট খামারে গুলশা মাছের একক চাষ করে ৩.৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করেন। ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৪৫ লাখ টাকা আয় হয় তার। তিনি মৎস চাষি হিসেবে নরসিংদীতে একজন রোল মডেল।  
 
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, মতিউর রহমানের ব্যবসায়িক উদ্যোগ অন্য অনেককেই উৎসাহিত করবে। খুব শিগগিরই আমি তার খামার পরিদর্শনে যাবো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।