এটা ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল প্রযুক্তি এসে দুনিয়ার চেহারাটাই দিয়েছে বদলে।
সব মিলিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন হয়ে উঠেছে আধুনিক কালের ‘সোনার ডিমপাড়া রাজহাঁস’। এজন্যেই বলা হচ্ছে: Digital Marketing tools and techniques provide business owners the best chances for competition, survival and even business growth.
এ কারণেই সবাই মুক্তকচ্ছ হয়ে ঝাঁপাচ্ছে ডিজিটাল প্রতিযোগিতায়। আর যে ডিজিটাল-হাঁস সোনার ডিম পাড়ে, তার পেছনেই লোকে টাকা ঢালবে! তাহলেই না সে টাকা ফিরে আসবে বহুগুণ হয়ে। দুনিয়াজুড়ে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বাজেট দিনকে দিন বাড়ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে যারা রাতারাতি সফলতার মুখ দেখতে চান, এটা তাদের জন্য বড় এক সুখবর।
কথায় আছে না, টাকায় টাকা আনে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে টাকা ঢাললে তা যে অপাত্রে যাবে না, প্রযুক্তিবান্ধব ব্যবসায়িক দুনিয়ার লোকজন তা ভালোমতোই জানে। সার্চ, অ্যাফিলিয়েশন, সোশ্যাল মিডিয়া বা মার্কেটিংয়ের নানা ক্ষেত্রে যদি আপনার নেশা ও ভালোবাসা থাকে, তাহলে আপনাকে প্রথমেই প্রমাণ করতে হবে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা। বাড়াতে হবে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। আর সেজন্য আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে। জানতে হবে কি কি করতে হবে আর কি কি করা যাবে না।
বিপত্তি বা প্রতিবন্ধক
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং দিনে দিনে মেট্রিক পদ্ধতি ও সংখ্যাতত্ত্বের ওপর অতি-নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এর মধ্য দিয়ে পরিমাপ ও গণনা বিপ্লব ঘটে গেছে বলেই যে সেদিকে বুঝে-না-বুঝে অন্ধের মতো ঝাঁপাতে হবে এমনও নয়। এক্ষেত্রে ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেওয়াটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। যারা যেনতেন প্রকারে বা পুশিং স্ট্রাটেজির (pushing strategy) মাধ্যমে পণ্য গছিয়ে দেবার নীতিতে চলবেন তারা বড় ভুল করবেন। কেননা তাতে হিতে বিপরীতই হবে। কেননা প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে এই পুশিং স্ট্রাটেজি ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি আর বিরক্তি উৎপাদনই করে চলেছে কেবল।
ব্যতিক্রমী ব্যান্ড প্রেজেন্স তৈরি যদি না করা যায় তাহলে দিন শেষে পস্তাতেই হয় কেবল। এ ধরনের একঘেঁয়ে বিরক্তিকর বাজারজাতকরণ কৌশল সবকিছু এমনভাবে বদলে দিতে চায়, যা উল্টো ফলই দ্যায়। সহজ কথায় যাকে বলা যায় ‘পুওর ব্র্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স’।
শেষ কথা হচ্ছে, মেট্রিক্সটা যেন সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের কল্যাণে লাগে খেয়াল রাখতে হবে সেদিকটায়। আর ‘কোটা ও কনভার্সন’—এর লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সেটা যে সেলস চ্যানেলের মাধ্যমেই হতে হবে এমনও নয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং প্রফেশনালদের করণীয়টা কি তাহলে? উত্তরটা সোজা, তাদেরকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে, খাপ খাইয়ে নিতে হবে। সেইসঙ্গে চমকপ্রদ, সবার নজরকাড়া, ভোক্তাবান্ধব দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা অর্জনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। এটা এক শিল্প যা শিখতে হবে, শিখেই তা প্রয়োগ করতে হবে।
সফলতা পেতে যা যা করা চাই
বলা হয়ে থাকে ডিজাইনটাই সবচে গুরুত্বপূর্ণ (User experience is driven by design)। আমরা যেসব চ্যানেলে ক্রেতাদের কাছ-বরাবর পৌঁছাতে পারি সেসব হচ্ছে প্রিন্ট, ডিজিটাল ও মোবাইল মিডিয়া। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বেশিরভাগেরই ফোকাস বা মনোযোগ থাকে সেদিকেই। কিন্তু ক্রেতারা হচ্ছে তারাই, যাদের রয়েছে নানা রকম চাহিদা ও প্রয়োজন। আপনার প্রোডাক্ট ক্রেতার প্রয়োজন কতটুকু মেটাতে পারছে সেটাই বড় কথা।
বারবার কৌশল বদলের আগে অভিজ্ঞতার সীমানা বাড়াতে হবে। যা বৃহত্তর আইডিয়ার জন্ম দেবে। আর তাহলেই আপনার ব্র্যান্ডটি ক্রেতার মনপসন্দ হবে। তাহলেই ক্রেতা সারাজীবন আপনার ব্র্যান্ডের ভক্ত হয়ে থাকবে।
এ ব্যাপারটির দিকে মনোযোগ দেয়ার ব্যাপারটি খুব বেশিদিনের নয়। সেটা করা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দিয়ে। কিন্তু বাস্তবে যা হয় তা হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা বিজনেস লজিক নিয়ে মাথা ঘামান বেশি। তারা ক্রেতার কাছে তাদের প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার ফিরিস্তি তুলে ধরাতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু ক্রেতার চাহিদাটা কি, সেদিকটায় মনোযোগ ততোটা দেন না তারা।
এ কারণে বেশিরভাগ মার্কেটিং উদ্যোগ শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে বা ভেস্তে যায়। মার্কেটিং টিমকে এই দিকটায় মনোযোগ দিতে হবে আগে। ক্রেতার চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে নিজেদের কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। নইলে কোনো কিছুতেই কোনো কাজ দেবে না।
অভিজ্ঞতানির্ভর সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের সারকথা
সংখ্যা বা পরিমাণটা বরাবরের মতো এখনও গুরুত্বপূর্ণ হলেও শেষ কথা নয় মোটেই। সংখ্যার সঙ্গে বিক্রয়ের সঠিক লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা চাই। সেই সঙ্গে যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট নয় সেগুলোও মাথায় রাখা চাই।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের ফোকাল পয়েন্টটা ঠিক করা উচিত ব্র্যান্ড প্র্যাকটিসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। আর সেটা যুক্তিযুক্তভাবে করা গেলে যে অভিজ্ঞতাটা অর্জিত হবে, আখেরে তা সুফল বয়ে আনবে। এতে করে ব্র্যান্ডের অভিনবত্ব বাড়ার পথ সুগম হবে। আর এর মধ্য দিয়ে ক্রেতা-ভোক্তা বা দর্শকরা তা সহজে অনুধাবন করতে যেমন পারবেন, তেমনিভাবে তারা আপনার ব্র্যান্ডটিকে স্বীকৃতিও দেবেন।
সর্বোপরি ব্র্যান্ডটিকে নিজেদের জন্য অপরিহার্য ভাববেন। এভাবেই ব্র্যান্ডের সঙ্গে ক্রেতা ও ভোক্তার একটি অচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
শেষ কথা হলো এই: পরিসংখ্যানের পেছনে অন্ধের মতো না ছুটে ব্র্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স অর্জনের দিকে বেশি করে মনোযোগ দিন। আর তাতেই মিলবে সুফল। মিলবে সুনাম আর খ্যাতি।
(বিদেশি সংবাদসূত্র অবলম্বনে)
বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৬
জেএম