ঢাকা: শুধু ভোক্তাদের নয়, কর্মীদেরও ঠকিয়ে চলেছে চেইন সুপারশপ আগোরা। টানা ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করছেন বিক্রয়কর্মীরা।
রাজধানীতে আগোরার একটি ব্রাঞ্চের বিক্রয়কর্মী নাছিমা (ছদ্মনাম) বাংলানিউজকে জানান, ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে তিনি আগোরায় চাকরি করছেন। এখানে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি। চাকরির সময় ৬ হাজার টাকা বেতনে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন, এখনো বেতন পাচ্ছেন ৬ হাজার টাকা।
নাছিমার স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার আয়ও বেশি নয়। নিজের বৃদ্ধ বাবা-মাকেও সাহায্য করতে হয়। চার বছরের চাকরিতে আয়ের কোনো উন্নতি নেই।
নাছিমা বলেন, আগোরায় নিয়োগের সময় বলা হয়েছিল প্রতিবছর বেতন বাড়বে। ভালো কাজের জন্য বোনাসও দেওয়ার কথা। কিন্তু তার কোনোটাই হয়নি।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে জেনেটিক প্লাজা সংলগ্ন আগোরার একজন বিক্রয়কর্মী জানান, গত তিন বছর ধরেই সাড়ে সাত হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছেন তিনি। অথচ কথায় কথায় দূর্ব্যবহার করা হয় এখানে। প্রতিদিন সকালে এসে পণ্য মোছা থেকে শুরু করে হিসাব এবং ক্রেতাদের প্রতি নজর রাখা, ট্যাগ লাগানো সবই করতে হয়। দুপুরে খাবারের জন্য আধ ঘণ্টাও সময় দেওয়া হয় না। বিকেলেও নেই নাস্তা বা চা পানের সুযোগ। আর রাতে আবার সব হিসাব শেষে মাল গুনে হিসাব বুঝিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত ১০টা বেজে যায়।
এই বিক্রয়কর্মী বলেন, চলতি বছরের শুরুতে বেশ কয়েকজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়। বলা হয়, কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন তাই খরচ কমাতে এই ছাঁটাই। এছাড়াও যারা আছি, তাদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। প্রতিশ্রুতির কোনোটিই পূরণ করেনি কর্তৃপক্ষ।
সীমান্ত স্কয়ার আগোরা ব্রাঞ্চের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, দিন দিন আগোরার মান কমে যাচ্ছে। মোবাইল কোর্ট অভিযান চালালেই নিম্নমানের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ক্রেতার সংখ্যাও কমছে। অথচ কর্তৃপক্ষ বিক্রি বাড়াতে আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে।
ওই বিক্রয় কর্মী আরও বলেন, কাঁচাপণ্য খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু এখানে দেখা যায় প্রায়ই কিছু বাসি পণ্য নিয়ে অভিযোগ তোলেন ক্রেতারা। এর জন্যও আমাদের দোষী করা হয়!
এই ব্রাঞ্চের ক্যাশে চাকরিরত একজন কর্মী বলেন, এখানে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ১০ হাজার টাকা বেতনে কেউ নিয়োগ পেলে সেই বেতনেই থাকতে হয়। তার আর বাড়ে না। আবার হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও নেই কোনো সাধুবাদ। এভাবে আর যাই হোক ব্যবসা হয় না। কারণ কর্মীরা সন্তুষ্ট না থাকলে সেবার মান বাড়ে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে মূল্য নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় দেখা যায় তা মানের তুলনায় খোলা বাজারের চেয়ে বেশি। তখন ক্রেতারা আমাদের জিজ্ঞাসা করেন বা পণ্য ফিরিয়ে দিতে চান। আবার কর্তৃপক্ষের চাপ থাকে সেই পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে বিক্রি করতে। এটা খুবই কঠিন কাজ। বলা যায় লোক ঠকানো।
** অফারের নামে পুরনো পণ্য বিক্রি আগোয়ার
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৬
এমএন/এএ