ঢাকা: পচা মাছ, মাংস, সবজি ও ভেজাল পণ্য উৎপাদন, বিক্রয় এবং প্রতারণার জন্য জরিমানা দেওয়া নিয়মিত ঘটনা রিটেইল চেইন শপ আগোরার কাছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণা একাধিকার হাতেনাতেও ধরেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)।
রাজধানীতে আগোরার কয়েকটি আউটলেট ঘুরে তাদের ক্রেতা সংকট দেখা যায়। ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ক্রেতা সংকটের কারণ হিসেবে এসব প্রতারণার কথা জানা যায়।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) মিরপুর-১ নম্বর সনি সিনেমা হলের কাছে আগোরার চেইনশপে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা পচনশীল পণ্য বাদ দিয়ে অন্যান্য পণ্য কিনছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর মাছ ও মাংসের সারিতে গিয়ে দেখা গেলো দু’একজন ক্রেতা। যারা আবার দরকষাকষি করছিলেন সেলসম্যানদের সঙ্গে।
সেই কষাকষি একটা সময় বিতর্কেও রূপ নিতে দেখা গেল। বিক্রেতা দাবি করছিলেন, গরুর মাংস টাটকা। কিন্তু ক্রেতা মাংস ধরে দেখে তা নাকচ করে দিচ্ছিলেন। বরং তোপ দাগছিলেন, ফ্রিজিং করে রাখা গরুর মাংস টাটকা থাকার প্রশ্নই আসে না।
আর মাছের সারিতে গিয়ে পাওয়া পচা গন্ধই বলে দিচ্ছিল সেখানকার অবস্থা। যে কারণে মাছ, মাংস ও সবজি বিক্রয়ের সারিতে অনেকটা ফাঁকা ছিল।
ক্রেতার এমন সংকট থাকলেও পকেট কাটতে এতটুকু পিছপা হচ্ছে না আগোরা। তারা উল্টো সাধারণ কাঁচাবাজারের চেয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে পচনশীল সবজি ও অন্যান্য পণ্য।
আউটলেটটি ঘুরে দেখা যায়, মাংস বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৩০ টাকা দরে। সাধারণ বাজারের চেয়ে চড়া দামে ছোট রুই বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৯৫ টাকা, পাঙ্গাস ১৪০ টাকা এবং তেলাপিয়া ২৩০ টাকা।
ছোট একটি প্যাকেটে কয়েকটি চিংড়ি দিয়ে দর লিখে দেওয়া হয়েছে ২৪৫ টাকা। এই চিংড়ির প্যাকেট রসে ভিজে পুরো মাছের সারিতে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
মাছের চেয়েও আগোরা বেশি চড়া দাম রাখছিল সবজি বিক্রির ক্ষেত্রে। তারা কেজিপ্রতি বেগুন বিক্রি করছিল ৫০ টাকা দরে, বরবটি ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা এবং কচুর লতি বিক্রি করছিল ৫০ টাকা দরে।
আগোরার এসব প্রতারণা ও ক্রেতা ঠকানো নিয়ে সকালেই কথা হয় মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা ও চেইন শপটির একসময়ের ক্রেতা হোসনে আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক সময় জেনে শুনেই পচা পণ্য কিনতে হয়। কী করবো? বাচ্চা মনিপুরী স্কুলে পড়ে। বাচ্চাকে সময় দিতে গিয়ে কাঁচা বাজারে যাওয়া হয় না। তবে আগোরার মাছ ও মাংসের প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নেই।
আগোরা থেকে চাল, ডাল, তেল ও কিছু শুকনো পণ্য কিনে ঘরে ফিরছিলেন মিরপুরের ইব্রাহিম খলিল। তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সেজন্য সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয় ইব্রাহিমকে। ইব্রাহিম বলেন, আগোরা থেকে আমি কোনো সময়ই মাছ, মাংসসহ পচনশীল কোনো পণ্য কিনি না। আমরা জানি, আগোরা পচা মাছ ও মাংস বিক্রি করে।
পচা মাছ-মাংস ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া পণ্য বিক্রির দায়ে একাধিকবার জরিমানা করা হয় আগোরার এ আউটলেটের। তারপরও ক্রেতা ঠকানো থেমে নেই এখানে। বাজার মনিটরিং টিম পরিচালনার জন্য এখানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রুটিন মাফিক কাজ করছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জরিমানার স্বীকারোক্তি দিলেন স্বয়ং আগোরার আউটলেট ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) দিপুই। তিনি বলেন, মাছ, মাংস ও এক্সপাইরিং ডেট না থাকার কারণে ওরা (বাজার মনিটরিং টিম) আমাদের এখানে জরিমানা করেছে। আমাদের কাছে মাছ ও মাংস ভালো মনে হয়েছে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে ভালো মনে হয়নি। বিএসটিআইয়ের লোগো না থাকার কারণে জরিমানা করা হয়েছে। ওনারা কোনো কথাই শোনেন না, জরিমানা করে চলে যান। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।
তারপরও কেন ভেজাল পণ্য বিক্রি করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আউটলেট ইন চার্জ বলেন, আমরা সচেতন হচ্ছি। যেন ভালো পণ্য সরবরাহ করতে পারি। তবে আমাদের ফল্টের (ভুল) কারণে জরিমানা হয়ে থাকে। মাছের কোয়ালিটি অনেক সময় ঠিক থাকে না। পচা মাছ ও মাংস বিক্রির দায়ে আমাদের জরিমানা করা হয়েছে। ওনারা (বাজার মনিটরিং টিম) প্রয়োজনীয় পেপার্স নিয়ে আসেন। আমাদের বিক্রি করা পণ্যের কোডের সঙ্গে মিল থাকে না, যে কারণে আমাদের জরিমানা করা হয়। তবে এতে আমাদের কোনো দোষ থাকে না। কারণ অনেক সময় সাপ্লাইয়াররাই আমাদের কাছে খারাপ পণ্য বিক্রি করে। এই মাশুল আমাদেরই দিতে হয়।
জানা যায়, মাছ-মাংস-সবজিতে জালিয়াতির পাশাপাশি আগোরার বিরুদ্ধে ফলে ফরমালিন বা ভেজাল মেশানোর অভিযোগও আছে। ফরমালিনযুক্ত আম বিক্রির দায়ে এই আউটলেটেই কয়েকবার জরিমানা করা হয়। বৃহস্পতিবার এই আউটলেটে প্রায় পঁচা আম বিক্রি হচ্ছিল ৯০ টাকা কেজি দরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৬
এমআইএস/এইচএ/