ঢাকা: রাজধানীতে ২৭টি শাখা থাকলেও হেড অফিসসহ বেশিরভাগ শাখার নেই ভ্যাট নিবন্ধন। ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) নেই বেশির ভাগ শাখায়।
নিয়ম করে নিজস্ব রশিদে ভ্যাট নিয়ে করা হয় পকেটস্থ। রেকর্ড না রেখে লুকিয়ে ফেলা হয় মোট বিক্রি। কোন শাখায় কতো শতাংশ ভ্যাট নেওয়া হয় তারও সঠিক হিসাব নেই।
রাজধানীর স্বনামধন্য কে জেড ফ্যাশন অ্যান্ড জুয়েলারির বিরুদ্ধে অনলাইনে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কাছে আসে এমন অসংখ্য অভিযোগ।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির চকবাজার, নিউমার্কেট ও গ্রিনরোড শাখায় চলে সোয়া ৬ ঘণ্টার অভিযান।
অভিযানে গেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে হুমকি। নাছোড়বান্দা মূসক গোয়েন্দা। প্রথমে দখলে নেয় সার্ভার, কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
ধুরন্ধর ম্যানেজার শাহীন কৌশলে ফোন করে বন্ধ করে দেন সার্ভার। প্রতিমাসে কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি ঢাকতে সার্ভার বন্ধ করেও শেষ রক্ষা হয়নি।
মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক একেএম সুলতান মাহমুদ বাংলানিউজকে অভিযান ও ভ্যাট ফাঁকির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুলতান মাহমুদের ভাষ্যমতে, হেড অফিসসহ বেশিরভাগ শাখার ভ্যাট নিবন্ধন নেই। জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে প্রতিমাসে প্রায় কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ফাঁকি দেয়।
অনলাইনে অসংখ্য ভোক্তা অভিযোগ করেন। অভিযোগ করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বড় তিনটি শাখা নির্বাচন করে ‘প্রাক পরিদর্শন’ করা হয়।
৩ জন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে অভিযান। ফাঁদে ফেলে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির গ্রিনরোডের প্রধান শাখার ম্যানেজার শাহীন ‘সার্ভার খুলতে দেবে না’, মন্ত্রীর লোক বরাত দিয়ে হুমকি দিতে থাকেন।
প্রধান শাখারই ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেই। হুমকি দিয়ে শাহীন বলেন, ফাঁকি তো আরো কতজন দেয়, শুধু আমাদের ধরেন কেন? আমরা তো একা ফাঁকি দেই না।
প্রাথমিক তল্লাশিতে প্রতিদিনের কিছু ক্যাশ মেমো আর কাগজ ছাড়া কিছুই পাওয়া গেল না। হুমকির মধ্যেও কৌশলে আমরা সার্ভার ও কম্পিউটার দখল নিয়ে নেই।
বেশিরভাগ ফাইল আটকে ফেলা হয়। সার্ভার থেকে প্রিন্ট করতে বলা হলে পার্সওয়ার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানায় শাহীন। প্রথমে সার্ভার থেকে তিন মাসের তথ্য প্রিন্ট করে দেয়।
সার্ভার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান লিংক-৩ এ ফোন করে সার্ভার বন্ধ করে দেন শাহীন। পরে শাহীন অশোভন আচরণ করলেও পাসওয়ার্ড জব্দ করা হয়।
জব্দ করা হয় ৭টি কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। জব্দ করা কাগজপত্র অনুযায়ী কয়েক কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
সুলতান মাহমুদ আরো বলেন, ২৭টি শাখার বেশিরভাগ রেজিস্ট্রেশন নেই। প্রতিমাসে আসে কোটি টাকার বেশি ভ্যাট। কিছু দেয় প্যাকেজ ভ্যাট, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমরা কারো ক্ষতি নয়, ভ্যাট সচেতনতায় কাজ করছি।
ভ্যাট রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের সম্পদ। সে ভ্যাট যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী মেরে খেতে না পারেন সেজন্য সর্তক থাকতে ও বেশি বেশি তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৬
আরইউ/জেডএস