ঢাকা: রাজধানীর কারওয়ানবাজার কাঁচাবাজার পার হয়ে কামারপট্টিতে প্রবেশ করতেই কানে আসে লোহায় হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। নতুন চাপাতি, বটি, ছুরি, চাকু তৈরি ও পুরনোগুলোতে শান দিচ্ছেন কামারশিল্পীরা।
ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে এমন কর্মযজ্ঞে এখন ব্যস্ত কামারপট্টি।
রোববার (২৮ আগস্ট) কারওয়ানবাজারসহ কয়েকটি কামারপট্টিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার যন্ত্রপাতি তৈরিতে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়েছে কামারশিল্পীদের। ঈদের বিক্রি এখনও তেমন শুরু না হলেও যন্ত্রপাতি তৈরিতে কারোরই দম ফেলার ফুরসত নেই।
বছরে একবার জমজমাট ব্যবসা করেন কামাররা। তা এই কোরবানির ঈদে। এজন্য ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে কয়লার আগুনে রড গলানো, গ্লেয়ারিং মেশিনে বটি, দা, কুড়াল, চাকু ও ছুরিতে শান দেওয়া, হামার দিয়ে লোহা পিটিয়ে পাইল করা, যন্ত্রপাতিতে বাট লাগানোসহ নানা কাজ।
কারওয়ানবাজারের কামারপট্টিতে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন সুবল কর্মকার।
কয়লার আগুনে লোহা পোড়াতে পোড়াতে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সারা বছর মোটামুটি হলেও ঈদের কয়েকদিন খুব ভালো বেচা-বিক্রি হয়। ঈদ এলে আমাদের ব্যস্ততাও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবারের ঈদের বেচা-বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। শুধু ঢাকার বাইরে থেকে অর্ডার আসছে। যন্ত্রপাতি তৈরি করে রাখছি। আশা করি, ১ সেপ্টেম্বরের পর ভালো বিক্রি হবে’।
গরুর দামের ওপর পশু জবাই ও মাংস কাটার যন্ত্রপাতির বেচা-বিক্রি নির্ভর করে বলে জানান রফিক এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার রফিক।
তিনি বলেন, ‘গরুর দাম বেশি হলে মানুষ কম কিনবে আর দাম কম হলে বেশি কিনবে। আমাদের চাপাতি, দা-ছুরি, চামড়া ছোলার চাকু ও বটিও সেভাবে বিক্রি হবে। ব্যবসা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে। তবে এবার ব্যবসা কেমন হবে বলতে পারছি না। কারণ, বেশ কিছুদিন আগে থেকে লোহা ও কয়লার ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া অনেকেই নতুন না কিনে পুরনো চাকু-ছুরিতে ধার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন’।
কামারপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, ১ কেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা। সাধারণ বটির মূল্য আকারভেদে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পশু জবাই করার ছুরি মাপ অনুযায়ী ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা, চামড়া ছোলার চাকু ২৫০ টাকা, সাধারণটি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা এবং হাড় ভাঙার জন্য চায়নিজ কুড়াল ৭০০ টাকা ও বাংলাদেশি কুড়াল ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এবারের কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসার লক্ষ্য জানিয়ে রফিক বলেন, ‘৭ লাখ টাকার পণ্য তৈরি করে রেখেছি। আশা করি, ৮/১০ লাখ টাকার ব্যবসা করতে পারবো। আমার এখান থেকে সারা দেশে পাইকারি অর্ডার যায়’।
ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অর্ডার নেবেন বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
এমসি/এএসআর