ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ভ্যাট মেলা হবে, বাঙালি ভ্যাট দিয়ে বাহাদুরি দেখাবে’

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
‘ভ্যাট মেলা হবে, বাঙালি ভ্যাট দিয়ে বাহাদুরি দেখাবে’

ভ্যাট বা মূসক হবে ভবিষ্যত রাজস্বের হাতিয়ার। ভ্যাটের মতো অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী বছরের জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হবে নতুন মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২।

ঢাকা: ভ্যাট বা মূসক হবে ভবিষ্যত রাজস্বের হাতিয়ার। ভ্যাটের মতো অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

আগামী বছরের জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হবে নতুন মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২।

এ আইন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভ্যাট ব্যবস্থা ২৫ বছরের সনাতনী পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে ভ্যাট আহরণে শুরু হলে রাজস্ব জিডিপিতে ভ্যাটের অবদান ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

ভ্যাটকে জনপ্রিয় ও ভ্যাট সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।

আয়করকে জনপ্রিয় করতে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা, কর অঞ্চলে মেলার আদলে আয়কর সপ্তাহ ও আয়কর দিবসে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন করদাতারা। ‘বাঙালি করমেলা, সপ্তাহে কর দিয়ে বাহাদুরি দেখিয়েছেন। করের মতো এবার ভ্যাট দিয়েও বাঙালি বাহাদুরি দেখাবেন বলে আশা করেনি এনবিআরের চেয়ারম্যান।
 
সম্প্রতি শেষ হওয়া আয়কর মেলা, সপ্তাহ সম্পর্কে মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের লোকজন রাজস্ব দিতে চান না- এমন অপবাদ ছিল। সে অপবাদ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হল। করদাতারা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, উপযুক্ত পরিবেশ পেলে রাজস্ব প্রদানে কখনো পিছপা হবেন না তারা’।

‘আয়কর মেলা, আয়কর সপ্তাহে তারই একটা প্রতিফলন দেখলাম। বাঙালি কর দেন না- এ ধারণা পাল্টে গেছে। আয়কর মেলা, আয়কর সপ্তাহসহ পুরো নভেম্বর জুড়ে করের মাসে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়ে দেশের উন্নয়নের অংশীজনরা বাহাদুরি দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে বাহাদুরি দেখাবেন কর দিয়ে’।
 
‘জাতীয় ভ্যাট দিবসের আগেই সুখবর পেলাম’ জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সারা বছরে করদাতা শনাক্তের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ লাখ থাকলেও বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত তা শুধু অর্জিতই নয়, লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২৫ লাখ ৩৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে’।

‘চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত ৫ লাখ ২১ হাজার ৩৮৩ জন নতুন করদাতা ই-টিআইএন নিয়েছেন। তারা বৈধ রাজস্ব প্রদানকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। এটি রাজস্ব বোর্ডের জন্য সম্মানের বিষয়। এর মাধ্যমে করদাতারা যে রাজস্ব প্রদান করে বাহাদুরি দেখাচ্ছেন, এর জন্য রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে তাদের সম্মান জানাই। করদাতাদের উৎসাহ, অংশগ্রহণ আর সমর্থনে রাজস্ব বোর্ড এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমেধ্যে যেসব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তা অতিক্রম করেছি, ভবিষ্যতেও করবো’।
 
‘আয়করের মতো ভ্যাট দিয়েও মানুষ বাহাদুরি দেখাবেন’- এমন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘আয়করের নিরঙ্কুশ সাফল্য উদ্দীপনা ও প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহে একই উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকবে। আয়করের মতো ডিসেম্বরে ভ্যাট দিয়ে বাঙালি বাহাদুরি দেখাবেন। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে যারা সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদান করে জনকল্যাণে অংশগ্রহণ করেছেন, সেই অংশীজনদের আমরা সম্মান দেখাবো। দেওয়া হবে বিভিন্ন সুবিধা’।
 
নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী বছরের জুলাই থেকে নতুন ‘মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ কার্যকর হবে। ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ এ আইন পাস ও রাষ্ট্রপতি এ আইনে স্বাক্ষর করেন। দিনটিকে স্মরণ করেই এবার ‘ভ্যাট দিচ্ছে জনগণ, দেশের হচ্ছে উন্নয়ন’- স্লোগানে ১০ ডিসেম্বর জাতীয় ভ্যাট দিবস পালন করবো। ৯ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পালিত হবে ভ্যাট সপ্তাহ। ১১ ডিসেম্বর অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে নতুন রাজস্ব ভবনে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারীদের সম্মাননা দেওয়া হবে।

‘এ বছর ভ্যাট নিয়ে সবার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে প্রায় ২৫ বছর ধরে ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আহরণের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সে আলোকে আমরা নতুন আইন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি’।
 
নতুন ভ্যাট আইনে কর্মকর্তাদের ‘স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার ব্যবহার’ কমবে উল্লেখ করে মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়নে বড় প্রস্তুতির বিষয় আছে। উৎসাহের বিষয় হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা নতুন আইন বাস্তবায়নের ব্যাপারে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। তারা বলছেন, ১৯৯১ সালের আইনের চেয়ে নতুন আইন সব দিক দিয়ে ভালো। এতে ভ্যাট কর্মকর্তাদের যে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ছিল সেগুলো হ্রাস পাবে। ভ্যাট প্রদানকারী ব্যবসায়ীরা অনায়াসে ভ্যাট দিতে উৎসাহী হবেন’।

‘অনলাইনে চালু হলে ঘরে বসে কার্যক্রম চালাতে পারবেন সবাই। সময় হ্রাস পাবে, ঝামেলা থাকবে না, সুবিধা বেশি পাবেন। ভ্যাট আদায়ে ইতিবাচক পরিবেশের দিকে যাচ্ছে এনবিআর। এবার জাতীয় ভ্যাট দিবসে নতুন ভ্যাট আইনের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হবে’।
 
এবার ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা অনুসারে কার্ডের পরিধি বৃদ্ধি ও ক্যাটাগরি অনুযায়ী দেওয়ার ফলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও এমন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভ্যাটের ক্ষেত্রেও উৎসাহ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ অন্য সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে’।
 
করের মতো ভ্যাট দিতেও উৎসাহ প্রদানে আয়কর মেলার আদলে ভ্যাট মেলা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সিলেট থেকে ভ্যাট মেলার যাত্রা শুরু করবো। আগামী বছরের ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি করার পরিকল্পনা রয়েছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে হবে’।

‘মেলায় ভ্যাট নিয়ে এ পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম, কি কি পদ্ধতিতে ভ্যাট আহরণ করা হয়, ভ্যাট কোথায় ব্যবহৃত হয় এবং ভ্যাট আইন ও এর ব্যবহার তুলে ধরা হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে ‘ভ্যাট এডুকেশন ফোরাম’ পরিচালনা করা হবে। নতুন ভ্যাট আইনে যে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তাও তুলে ধরা হবে’।

‘বিশেষ করে ইসিআর স্থাপন ও ব্যবহার সম্পর্কে জানানো হবে। নতুন আইনে, নতুন সুযোগে ইসিআর ব্যবহার করলে কোনো অসাধু ভ্যাট কর্মকর্তা গিয়ে তাদের অহেতুক হয়রানি করতে পারবেন না। নতুন আইন ব্যবসায়ীদের কার্যক্রমকেও সাবলীল করবে। ইসিআর মেশিন এনবিআর দেবে। ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে বিনা শুল্কে, অপেক্ষাকৃত কম বাজার মূল্যে সরবরাহ করবে এনবিআর’।
 
‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাতে রাজস্ব আহরণের তাগিদ বা আন্তরিকতা তৈরির বিষয়ে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। করদাতাদের মধ্যে যেন রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রবণতা না থাকে, সে বিষয়টির ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক, আমরাও জনকল্যাণে রাজস্ব সংগ্রহের কাজ করছি। উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব সংগ্রহ অব্যাহত থাকবে’।
 
মো. নজিবুর রহমান জানান, চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৭৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা মোট রাজস্বের ৩৬.৪৮ শতাংশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।