আজ যেখানে আইএলও-ঘোষিত গ্রিন কারখানাতে উৎপাদন নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকার কথা মানুষটির, সেখানে তার বেশিরভাগ সময়ই কাটছে উত্তরায় নিজের ছোট একটি অফিসে বসে। অথচ মাত্র তিন বছর আগেও লিবার্টি গ্রুপের দুটি কারখানায় প্রায় দেড় হাজার মেশিনে কাজ করতো প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক।
কোনো পরির্দশন ছাড়াই অ্যাকর্ড ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যায়িত করে বন্ধ করে দিয়েছে লিবার্টি গ্রুপের সকল কারখানা। বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন মোজাম্মেল হক।
তিনি বলছিলেন: ১৯৮৪ সালে প্রথমে কাজ শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তখন এই ব্যবসায়ের কিছুই বুঝতাম না। কোরিয়া থেকে ম্যানেজার আনলাম। এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী নিয়ে এলাম। তাদের বসবাসের জন্য বনানীতে থাকার ব্যবস্থা করা হলো। সবাই যখন শার্ট রফতানি নিয়ে ব্যস্ত তখন আমি কাজ শুরু করলাম ডেনিম নিয়ে।
বলে যাচ্ছিলেন মোজাম্মেল হক: ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। ট্যাস্কো, প্রাইমার্কসহ ১২টি ক্রেতা-প্রতিষ্ঠানের কাজ করতাম প্রতিবছর। আমাদের দেশের শ্রমিকদের মতো এতোটা বাধ্যগত শ্রমিক কোনো দেশে নেই। রাত দিন কাজ করেছি। সাভারে ২০ বিঘার ওপর কারখানা করেছিলাম। ডে-কেয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মেডিক্যাল সেন্টার সবকিছুই ছিলো। ভেবেছিলাম শেষ বয়সটা সেখানেই কাটাবো। ২০১৩ সালে লিবার্টির টার্নওভার ছিলো ৪১২ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু তারপর অ্যাকর্ড-র ভুল সিদ্ধান্তে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। কথাগুলো বলেই চোখ মুছতে লাগলেন লিবার্টি গ্রুপের এই কর্ণধার।
মোজাম্মেল হক বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পরপরই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান টেস্কো একটি বেসরকারি ফার্ম দিয়ে পরিদর্শন করায় সাভারের কারখানা।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবেদন দেয়া হয়, যে কোনো সময় নাকি ভবন ধসে পড়তে পারে। তারপর বুয়েট ও শ্রম মন্ত্রণালয় ফায়ার সার্ভিস দিয়ে পরিদর্শন করায় লিবার্টি গ্রুপের ভবন। কিন্তু পাওয়া যায়নি ধসে পড়ার মতো কোনো আলামত। তারপরও কোনো কথা শোনেনি অ্যাকর্ড। তারা সম্পর্ক ছেদ করে লিবার্টি গ্রুপের সাথে। বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। বেকার হয়ে যান প্রায় সাত হাজার শ্রমিক।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নানাভাবে অ্যাকর্ড-এর সাথে আলোচনার চেষ্টা করেন মোজাম্মেল হক। অ্যাকর্ড সাড়া দেয়নি। উপায়ান্তর না দেখে লিবার্টি গ্রুপ আমস্টারডামের আদালত থেকে উকিল নোটিশ পাঠান অ্যাকর্ডকে।
২০১৫ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট করা হয়। বাংলাদেশ হাইকোর্ট সকল দিক বিবেচনা করে চলতি বছরের মার্চ মাসে অ্যাকর্ডকে অতি শ্রীঘ্র লিবার্টি গ্রুপের ভবনসমূহ পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, আইনের দরজায় বিচারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। আদালত বরাবরই সুষ্ঠু বিচার করে থাকেন। আশা করছি, সব ঠিক থাকলে ফের আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। পূর্ণ উদ্যমে ফের লিবার্টি গ্রুপের কারখানা মুখরিত হবে শ্রমিকদের পদচারণায়।
তবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে অ্যাকর্ডের এ ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা বন্ধ করার জন্য মোজাম্মেল হক আহ্বান জানিয়েছেন সরকার ও বিজিএমইএ-র প্রতি।
লিবার্টি গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, অ্যাকর্ডের কারণে আমি নি:স্ব হয়ে গিয়েছি। এই তিন বছরে সুনামতো ক্ষুন্ন হয়েছেই, সেই সঙ্গে প্রায় হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কোনো পরিদর্শন না করেই ইচ্ছামতো আর যাতে কোনো প্রতিষ্ঠানকে তারা এভাবে পথে নামাতে না পারে; তাই অ্যাকর্ডের লাগাম টেনে ধরতে হবে। নয়তো এমন আরো বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে; বেকার হবে হাজারও শ্রমিক। সরকার ও বিজিএমইএ‘কে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। যাই করুক না কেন আইনের মধ্যে থাকতে তাদের বাধ্য করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
ইউএম/জেএম