শনিবার (২৯এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন। ‘ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস ফর ইকোনমিক রিপোর্টার’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজন করে চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সোসাইটি বাংলাদেশ ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)।
এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগই আসছে দেশের রফতানি ও রেমিট্যান্স খাত থেকে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৮০-৮৫ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সবশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বলে বিবেচিত হচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করতে এবং এর প্রসার ঘটানোরও আহ্বান জানান এ অর্থনীতিবিদ।
মানবসম্পদ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছোট এই দেশে অনেক মানবসম্পদ রয়েছে। কিন্তু এই মানবসম্পদের উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।
এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাংলাদেশ যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, সে হারে মানবসম্পদের উন্নয়ন হচ্ছে না। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনে পাকিস্তান ছাড়া সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষা পর্যায়েও পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া বাদে সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক কমিশনার ও আইডিএলসি ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ খান বলেন, পিডব্লিউসি ও অন্যান্য জরিপ মতে, বাংলাদেশ অর্থনীতিতে একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এখানে অল্প জায়গায় অনেক মানুষ বাস করে। ফলে অল্প টাকা বিনিয়োগ করেই অনেক বেশি ব্যবসা করা যাচ্ছে। আর এ কারণে ৩, ৫ এবং ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বে পোশাক রফতানিতে এগিয়ে রয়েছে চীন। দেশের মানবসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে শীর্ষে উঠে আসবে।
পুঁজিবাজারের প্রসঙ্গ টেনে আরিফ খান বলেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, হংকসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের অবদান ৯০ শতাংশ। বাকি ১০ শতাংশ অবদান ব্যাংক খাতের। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১০ শতাংশ এবং ব্যাংক খাতের অবদান ৯০ শতাংশ। এটা বাড়াতে হবে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তৃতা করেন সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে ব্যাংক খাতের বিকল্প হিসেবে পুঁজিবাজার এবং বন্ড মার্কেট মূল উৎস।
ব্যাংক খাতে সুদের হার বেশি এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি বেশি। সুতরাং ঝুঁকি কমাতে বন্ডে বিনিয়োগের আহবান জানান তিনি।
সেমিনারে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান।
সেমিনারে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধগুলোতে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়। এসময় সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুজ্জামান, ব্র্যাক ইপিএলের প্রধান গবেষক আলী ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এমএফআই/এইচএ/