ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৬ বছরের গাফিলতিতে হাওরে বিপর্যয়, এখন কঠোর আইএমইডি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
৬ বছরের গাফিলতিতে হাওরে বিপর্যয়, এখন কঠোর আইএমইডি ৬ বছরের গাফিলতিতে হাওরে বিপর্যয়- ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: গত ২০১৫ সালের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়ার কথাছিলো বাঁধগুলো। এ জন্য ৬৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন হতে পারেনি। যার অনিবার্য পরিনতিতে সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে।

এরই মধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন সুনামগঞ্জের প্রধান প্রকৌশলী ছাড়াও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিন প্রকৌশলী। আগেই জানা গিয়েছিলো এই প্রকৌশলীদের যোগসাজশেই সম্ভব হয়নি সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন।

গত প্রায় ছয় বছর ধরে ‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে চরম অবহেলা লক্ষ্য করা গেছে।

এর আওতায় ডুবন্ত বাঁধের আকৃতি ফিরিয়ে আনা, পুনঃনির্মাণ, কম্পার্টমেন্টাল ডাইক, হাওরে ক্রস বাঁধ, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, ড্রেনেজ আউটলেট, গেটেড স্ট্রাকচার, ইরিগেশন ইনলেট তৈরি ছাড়াও সুরমা ও বৌলাই নদীতে খনন এবং অভ্যন্তরীণ খাল পুনঃখনন এমন সব খাতে অরথ খরচ করার কথা ছিলো।

সূত্র জানিয়েছে, মার্চ ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয় মাত্র ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
 
মাত্র কয়েকজনের গাফিলতিতে এখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ‍দুই কোটি মানুষ। প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন বোরো ধান বানে ভেসে গেছে। যার প্রভাব কেবল তাৎক্ষণিকই নয়, আগামী কয়েক বছরের অর্থনীতির ওপর পড়বে হাওরবাসীর ওপর।

তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ( আইএমইডি) বিষয়টিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এরই মধ্যে হাওর এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন সরকারি প্রকল্প তদারকি সংস্থাটির কর্মকর্তারা। কেনই বা ছয় বছরে হাওরে বাঁধ নির্মাণে অবহেলা এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট ৩০ দিনের মধ্যেই জবাব চেয়েছে আইএমইডি।
 
অবহেলার কারণেই প্রকল্প এলাকা অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, জামালগঞ্জ,  তাহিরপুর, ধরমপাশা, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ,  বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, সিলেট সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ,  গোলাপগঞ্জ, বিয়ানিবাজার, মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল,নবীগঞ্জ, বানিয়াচং, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে আইএমইডি-এর পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
 
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকল্পের মন্থর অগ্রগতি এবং আইএমইডি জবাবদিহিতা চাওয়া প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্ব এড়ান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতনরা। অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানউজকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারোর সঙ্গে কথা বলুন। ’

প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ত্বে ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল,সিলেট) মোঃ আব্দুল হাই। এরই মধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
 
গত কয়েক ধরে মিডিয়াকেও এড়িয়ে চলছিলেন এই প্রকৌশলী। ছয় বছরে প্রকল্পের মাত্র ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ অগ্রগতি ও আইএমইডি’র প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই ব্যস্ত আছি। এই বিষয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। ’

এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, হাওরের জন্য প্রকল্পটি অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ ছিলো। যথা সময়ে এটি বাস্তবায়ন করলে হাওরের ক্ষয়ক্ষতিও অনেকাংশে কম হতে পারতো।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
এমআইএস/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।