‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৭’ তে বলা হয়েছে পরিচালকরা একটানা ৯ বছর একই ব্যক্তি বেসরকারি কোনো ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। আর একটি ব্যাংকে একই পরিবার থেকে একসঙ্গে চারজন পরিচালকও হতে পারবেন।
সোমবার (৮ মে) ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মেয়াদ একটানা নয় বছর ও একই পরিবারের পরিচালকের সংখ্যা চার করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, এখন থেকে আমানতকারীরা একটি পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বেন। তাদের কাছে দেশের সম্পদ বন্দি হয়ে থাকবে। ফলে তারা (পরিচালক) যেভাবে চাইবে সেভাবেই ব্যাংকের টাকা খরচ করতে পারবেন। সুষম বণ্টনের অর্থনীতি আর থাকবে না। ব্যাংকে পরিচালকদের কায়েমি স্বার্থ বাস্তবায়ন হবে।
২০১৩ সালে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে টানা দুই মেয়াদের বেশি পরিচালক পদে থাকার সুযোগ নেই। নতুন করে পরিচালক হতে হবে তিন বছর পর। এছাড়াও একই পরিবার থেকে দুইজনের বেশি পরিচালক না থাকারও বিধান রয়েছে। কিন্তু একই পরিবার থেকে চারজন এবং ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা দুই মেয়াদের বেশি সময় থাকতে চান।
এ বিষয়ে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে পরিচালকরা ২০১৬ সালের অক্টোবরে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। আবেদনে ১৩ ধরনের সুবিধা চান।
সরকার ব্যাংক মালিকদের আবেদন বিবেচনা করে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও সঙ্গে ঋণ গ্রহীতাদের জন্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে কঠোর শর্ত। বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে ওই ঋণের জামিনদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও খেলাপি হবে। খেলাপি ঋণ গ্রহীতা যেমন নতুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না, তেমনি খেলাপি ঋণের জামিনদারও নতুন ঋণ পাওয়ার অযোগ্য হবেন।
এ বিষয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ ঋণ গ্রহীতারা খেলাপি হলে তার দায় জামিনদারেরে উপরও বর্তাবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পরিচালকদের একটানা নয় বছর থাকার সুযোগ ও একই পরিবারের চারজন পরিচালক থাকার সুযোগ ব্যাংকের সুশাসনের পরিপন্থি। এতে ব্যাংকগুলো একটি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ছয় বছরই ভালো ছিল। সরকার এটা ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে করেছে। আর ঋণ গ্রহীতাদের জামিনদার হতে পারলে খেলাপি হলে তার দায় নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক।
জানা গেছে, বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সভাপতি নজরুল মজুমদার ও কয়েকজন পরিচালক অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আজীবন পরিচালক থাকার সুযোগ চান। তা না হলে অন্তত আরও তিন বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর দাবি করেন তারা।
তাদের ওই দাবির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে আপত্তি করে। অর্থ মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করে। অনুমোদনের ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচালকরা নতুন আইনের ক্ষমতাবলে আরও তিন বছর পরিচালক হিসেবে থাকার সুযোগ পাবেন। সঙ্গে থাকছে একই পরিবার থেকে চারজনের পরিচালক হওয়ার সুযোগ।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠিত ব্যাংক সংস্কার কমিটির সুপারিশে একই পরিবার থেকে একাধিক পরিচালক নিয়োগ না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। সংশোধিত আইনের খসড়া তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিদ্যমান আইনে পরিচালক নিয়োগের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। ব্যাংক পরিচালকরা এটি প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিলেন। তবে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, পরিচালক নিয়োগের আগে বা পরে অনুমোদন নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৭
এসই/এমজেএফ