নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং বিষয়ক এক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবসায়ীরা এ কথা জানান। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, পেঁয়াজ ছাড়া সব পণ্যের দামই ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, দাম বাড়লেও তারা পণ্য কিনছেন। এর সুযোগ নিচ্ছেন কিছু ব্যবসায়ী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা মন্ত্রীকে বলেন, বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৮ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। আর মিশর থেকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) করা পেঁয়াজের দর পড়ছে ৩৮ টাকা।
‘মিশর থেকে কেনা পেঁয়াজ দ্রুত চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবে। কিন্তু দাম কমাতে হলে বন্দরে তা সময় মতো খালাস করতে হবে। নইলে ঈদের আগে দাম কমার সম্ভাবনা নেই,’ যোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
এ কথা শুনে তখনই বাণিজ্যমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খালেদ ইকবালকে টেলিফোন করেন। বন্দর চেয়ারম্যান মন্ত্রীকে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বন্দরকে নিত্যপণ্য জরুরি ভিত্তিতে খালাসের জন্য লিখলে তা বন্দরে পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খালাস করা হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পেঁয়াজ, লবণ, আদা, রসুনসহ সব নিত্যপণ্যের মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী পেঁয়াজ প্রতিবেশী দেশ (ভারত) থেকে আমদানি করা হয়। বন্যার কারণে সেখানেও পেঁয়াজের দাম বেশি।
‘সেজন্য আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কিছুটা বেড়েছে। বিকল্প হিসেবে মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো বাজারে আসবে। ’
বৈঠকে জানানো হয়, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ মেট্রিকটন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। বাকি ৪ লাখ মেট্রিকটন চাহিদা পূরণ হয় আমদানি করে।
এবারের বন্যায় দেশি পেঁয়াজের মজুদের অর্ধেকই নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে চাহিদা বাড়ায় ভারত এর দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া বন্যায় ভারতেও অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে।
নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় চামড়ায় ব্যবহার ও চাহিদা মেটানোর জন্য ৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দেশের চলমান ২৩২ টি কারখানাকে ২ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন করে লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে কক্সবাজারের লবণ উৎপাদনকারী ও কারখানা মালিকরাও রয়েছেন বলে জানান তিনি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যবসা-বান্ধব সরকার ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সহযোগিতা নিয়ে ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্য ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছেন।
‘ঈদকে সামনে রেখে যাতে কোনো পণ্যের মূল্য বেড়ে না যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। ’
এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু বিশেষ করে গরুর সংকট সৃষ্টি হবে না। সরকারের বিশেষ উদ্যোগে এখন দেশে পর্যাপ্ত গরু উৎপাদন হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশ থেকে আর গরু আমদানি করার প্রয়োজন হবে না।
বৈঠকে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর, আমদানি ও রফতানি অধিদফতরের প্রধান নিয়ন্ত্রক আফরোজা খান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দফতরের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের মালিক ও প্রতিনিধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কারকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭/আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা
আরএম/এমএ/