ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সরকারি ব্যাংকের ঋণের ২৭ শতাংশ খেলাপি লজ্জাজনক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
সরকারি ব্যাংকের ঋণের ২৭ শতাংশ খেলাপি লজ্জাজনক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত/ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: সরকারি ব্যাংকের মোট ঋণের ২৭ ভাগ খেলাপি হওয়াকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

শনিবার (২৬ আগস্ট) সিরডাপ মিলনায়তনে দিনব্যাপী ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের অবস্থা পর্যালোচনা: চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ৫৭টি ব্যাংক আছে।

অ্যাকাউন্টের সংখ্যা আট কোটি। এরমধ্যে ডিফল্ট (ঋণ খোলাপি) সংখ্যা ১০ থেকে ১১ শতাংশ। ‘ইটস নট ব্যাড’। কিন্তু সরকারি ব্যাংকের ডিফল্টের হার ২৭ শতাংশ। এটা লজ্জার। এটা কমাতে হবে।

ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঋণ অবলোপন মানে কিন্তু মাফ করা নয়, ঋণ জীবিত রাখা। এটা জীবিত রেখে আদায় করার দায়িত্ব আপনাদের (ব্যাংকারদের)। ব্যাংকের উচ্চপদে নিয়োগের জন্য সরকার থেকে, হ্যাঁ, ইন্টারফেয়ার করা হয়। এটা খারাপ না। এর দরকার আছে। তবে জেনারেল ম্যানেজার কিভাবে নিয়োগ হয় আমি জানিনা। আইএম নট শিওর। আই থিংক ইটস ওনলি জাস্টিফাইড ওয়ার্ক।

তিনি বলেন, ব্যাংকে যারা কাজ করবেন তাদের সবারই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা ও যোগ্যতা থাকতে হবে। কোনো ‘ক্যালরি পিপল’ ব্যাংকে থাকবে না। একজন একটি কেস নিয়ে কাজ করবে, দেখবে। সে না পারলে অন্যজনের কাছে যাবে। ঋণ নিতে কেনো একজনকে আটটি ঘাট পার হতে হবে! আপনারা এটা ঠিক করে দেবেন। এজন্য গ্রাহকের কাছ থেকে যে ঋণ প্রস্তাব আসে তা উন্নত হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আপনারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেবেন। প্রত্যেক ব্যাংকের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। তবে তা ঢাকা বা বিভাগ কেন্দ্রিক। এজন্য অনেকগুলো ব্যাংক মিলে ৬৪ জেলার কমপক্ষে ৩০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলতে পারেন।

আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশে একসময় মার্জারি হবে। অনেকগুলো ব্যাংক একসঙ্গে হয়ে পরিচালিত হবে। মার্চ করবে। এরজন্য আগামী মার্চে একটি গাইড লাইন করার কাজ শুরু করবো। সরকার কাউকে মার্চ করতে বাধ্য করবে না। তারা নিজেরাই উদ্যোগী হবে। সব দেশেই এক সময় এটা হয়েছে। আমাদের দেশেও তা হবে। যথা সময়েই হবে। আমরা চাই এটা অটোমেটিক্যালি হোক। তবে এরজন্য একটা গাইড লাইন থাকা দরকার।

কর্মশালায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যখন রাষ্ট্রের কিছুই ছিলনা, তখন এ ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রের জন্য অনেক কিছু করেছে। কিন্তু আমরা কেবল হোপ নিয়ে বেচেঁ থাকতে পারিনা। আমরা কেবল অতীত নিয়ে ঠিকতে পারবো না। সরকারি ব্যাংকে অবশ্যই দুর্নীতি আছে। তবে তার চেয়েও বেশি হলো অপচয়। এটা ব্যক্তি অপচয়, প্রাতিষ্ঠানিক অপচয়, ঐতিহাসিক অপচয় ইত্যাদি। এইসব অপচয় এক‍াত্র করলে সব দুর্নীতিকে ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বলা হয় বিদেশে ও বিপদে পড়লে ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রের কাছ থেকে মূলধন নিয়ে ঘাটতিপূরণ করে। হ্যাঁ নেয়। কিন্তু তারা নিয়ম মেনে শর্তসাপেক্ষে সে টাকা বেল আউট হিসেবে নেয়। আবার শর্তানুযায়ী তা ফেরতও দেয়। কিন্তু আপনারা তা ফেরত দেন না। আপনারা এটাকে গিফট আউট হিসেবে ব্যবহার করেন। বেল আউট ও গিফট আউটের মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা ব্যাংকারদের বুঝতে হবে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ খোলায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অবজারভার নিয়োগ সম্পর্কে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্রাঞ্চ খোলা ও বন্ধর বিষয়ে ব্যাংকগুলোই তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। আর অবজারভার নিয়োগ দেওয়া হবে কেস টু কেস। অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতীয় অবজারভার নিয়োগ দেবেন, তারা মহীসুরে বসে বাতাস খাবেন এটা হবেনা। তারা কেস টু কেস আসবেন, কাজ করবেন চলে যাবেন। সম্পর্ক শেষ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তৃতায় বলেন, একটি প্রাইভেট ব্যাংক যদি ১৫-২০টি শাখা নিয়ে ১৫০ কোটি, ৪০-৫০টি শাখা নিয়ে ৫০০ কোটি টাকা বছরে মুনাফা করতে পারে, তবে সরকারি ব্যাংক কেনো নয়! তারা কি হাতে আলাউদ্দীনের চ্যারাগ পেয়েছে!

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মাত্র ৭০/৭৫ জন মানুষ ব্যাংকটির ২৯’শ কোটি টাকা গায়েব করে ফেললো। একদিন আগে অ্যাকাউন্ট খুলে, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে। এরসঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা পরিষদ দায়ী। আমরা সব কিছু উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি। তারপরও দুদক এবং সরকার কিছু করতে পারলো না। বারবার চিঠি দিয়েও দুদককে সংসদীয় কমিটির সামনে নেওয়া যায়নি। জানি না এর কারণ কি!

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির তার বক্তৃতায় বলেন, রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার প্রকল্প, পিপিপি, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের অবদান রয়েছে। দেশের মোট ব্যাংকিংয়ের ৩৮ ভাগ পরিচালিত হয় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকসহ যা ৫৩ ভাগ।

অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান সিইও, এমডি, ইন্সুরেন্স বিভাগের পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, দুদক সচিব, ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকিং ডিভিশনের সচিব ইউনুসুর রহমান। সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া এ কর্মশালা চলবে সন্ধা পর্যন্ত। কর্মশালায় পাওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে একটি সুপারিশ মালা তৈরি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
আরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।