ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চাকরি ছেড়ে খামারি, ১৩ হাজারের বিনিয়োগ পৌঁছেছে ৫০ লাখে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
চাকরি ছেড়ে খামারি, ১৩ হাজারের বিনিয়োগ পৌঁছেছে ৫০ লাখে সফল খামারি মো. আকবর হোসেন/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: সফলতার এ গল্পের শুরুটা ১৯৯৯ সালের শেষ দিকের। ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব কমার্স (বিকম) পাস করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছিলেন দাগনভূঞা উপজেলার যুবক মো. আকবর হোসেন। ৫ বছর চাকরি করার পর বিরক্তি চলে আসে তার। সব ছেড়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে...

মনস্থির করেন খামার করবেন, নিজ বিনিয়োগে স্বাধীনভাবে রোজগার করবেন। তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন যুব উন্নয়ন থেকে।

প্রশিক্ষণ শেষ করে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন হলেস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী। প্রবল আগ্রহ আর কর্মস্পৃহার কারণে আকবরকে আর থেমে থাকতে হয়নি। সেই ১৩ হাজার টাকার বিনিয়োগ বর্তমানে এসে পৌঁছেছে প্রায় ৫০ লাখে।  

শনিবার (০২ ডিসেম্বর) বিকালে তার খামারে গিয়ে দেখা যায় সফলতার বাস্তব চিত্র। আকবর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে গ্রামে বাড়ির পাশের খালি জায়গাকে কাজে লাগিয়েই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আয় করা যায় যেকোনো ভালো চাকরির বেতনের চাইতে বেশি টাকা।  

আকবর বলেন, ১৩ হাজার টাকা দিয়ে যে একটি গাভী কিনেছিলেন তা থেকে পরবর্তীতে হয়েছিলো ৩০টি গরু।
আকবরের ভার্মি কম্পোস্ট প্রকল্প পরিচর্যায় তার স্ত্রী জোলেখা বেগম। আকবর জানান, ডেইরি খামারের পাশেই গবাদি পশুর গোবর দিয়ে তৈরি করেছেন বায়োগ্যাস প্লান্ট, তা থেকে আয় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। প্লান্টে ব্যবহৃত গোবরগুলো এরপর ব্যবহার করা হয় ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরিতে। প্রতি মাসে আয়ের ব্যাপারে আকবর জানান, ডেইরি খামার, দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করে আয় হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা, ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা। এর বাইরে বাড়ির পাশের খালি জমিতে চাষ করছেন উন্নত জাতের ঘাঁস। তা থেকেও আয় করছেন। রয়েছে সবজি ক্ষেত। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা মাসিক আয় করেন আকবর। আকবর জানান চাকরির চাইতে এভাবে আয় করা অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের।  

আকবর হোসনে জানান, তার স্ত্রী জোলেখা খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেও খামারের কাজে দারুন ভাবে সহযোগিতা করেন। আকবর জানান, তার এ সফলতার ভাগিদার তার স্ত্রীও। তাকে ছাড়া এতোদূর আসা সম্ভব হতো না।  

জুলেখা জানান,স্বামী আকবর হোসেন একজন উচ্চ শিক্ষিত হয়েও খামার করছেন,এটি গর্ব করার বিষয়। শুধু চাকরি না করে গ্রামের যুবকদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা প্রয়োজন।
আকবরের ডেইরি খামার/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমআকবরের সফলতার ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফের সাথে। তিনি জানান, আকবর এবং তার স্ত্রী জোলেখা দুজনেই শিক্ষিত হওয়ার কারণে কৃষি অফিসের পরামর্শ মত তারা খামার পরিচালনা করেন। যার ফলে তেমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না তাদের, এছাড়া প্রবল আগ্রহ ও পরিশ্রম তাদেরকে সফলতা এনে দিয়েছে।  

সফল খামারি মো. আকবর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ক্ষুদ্র খামারি থেকে তিনি বড় খামারিতে পরিণত হয়েছেন। শুধু চাকরির পিছে না দৌড়ে গ্রামের অনাবাদি জমিতে কৃষি উদ্যোগ নেয়া অনেক লাভজনক। কৃষি খামারে যেমন ভাবে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তেমনি ভাবে উৎপাদিত পণ্য সমাজের মানুষের জন্য কাজে আসে। জীবিকার পাশাপাশি এটি এক ধরনের সেবাও। আকবর জানান, এমন সফল খামারি হতে হলে অবশ্যই প্রবল আগ্রহ ও কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলে অবশ্যই সফলতা আসবে।  

কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, আকবরের মত কোন খামারি যদি উদ্যোগ নিতে চায় তাহলে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে সরকার। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ঋণ সহায়তাসহ যেকোনো পরামর্শে পাশে থাকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৭
এসএইচডি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।