ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টিসিবির পণ্য বিক্রিতে অব্যবস্থাপনা, ক্রেতারা মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২১
টিসিবির পণ্য বিক্রিতে অব্যবস্থাপনা, ক্রেতারা মানছে না স্বাস্থ্যবিধি গাদাগাদি করে টিসিবির পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে চলমান ‘কঠোর লকডাউনে’ ও আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে আরেক দফা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীসহ সারাদেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সুবিধার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

কিন্তু নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছে সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে পণ্য কিনতে এসেছে টিসিবির অব্যবস্থাপনায় পণ্য না পাওয়ার অনিশ্চয়তা ও মারামারিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে নিম্ন আয়ের ভোক্তারা।

বুধবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ধোলাইখাল, দয়াগঞ্জ, লোহারপুল, লক্ষীবাজার, সচিবালয় গেট, রামপুরা, বাড্ডা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টিসিবির ট্রাক সেলে কম দামে পণ্য কিনতে নিম্ন আয়ের নগরবাসী হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। মহামারি করোনার ভয়েও পরিবারের সামান্য প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কঠোর বিধিনিষেধ মধ্যেও ন্যায্য মূল্যে পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। এমনকি নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। তাদের কেউ করোনায় চাকরি হারিয়েছেন, কারও কমেছে আয়ের সুযোগ। সংসারের খরচ মেটাতে যখন হিমশিম খেতে হচ্ছে মাসের পর মাস। তখন সুলভ মূল্যের পণ্য নিয়েই ঘরে ফিরতে চান স্বল্প আয়ের মানুষেরা।

জানা গেছে, গত দুই দিন পণ্য না পেয়ে ঘুরে গেছেন অনেকেই। তাই শেষ পর্যন্ত পণ্য হাতে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় থাকেন ভোক্তারা। এরই মধ্যে রয়েছে নিয়ম ভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগ। টিসিবির অনুরোধের পরও বিক্রি কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা রোধে মাঠ প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না ডিলাররা।

এদিন সচিবালয়ের পশ্চিম গেটে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক আসে। ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গেই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বলতে সেখানে কিছুই নেই। গাদাগাদি করে লাইন দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতারা। কারও কারও মুখে মাস্ক থাকলেও অনেকের মুখেই তা দেখা যায়নি। লাইনের ছবি তোলার সময় কেউ কেউ জামার পকেটে ভাজ করে রাখা মাস্ক বের করে পরেছেন। তার কিছুক্ষণ পরেই লাইনে কে কার আগে পণ্য নেবে তা নিয়ে ঝগড়া শুরু হলে এক পর্যায়ে ধাক্কা ও মারামারি শুরু হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক চলে যায়। আবার আধা ঘণ্টা পরে সেখানে পণ্যবাহী ট্রাক আসে।

সচিবালয়ের সামনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিসিবির পণ্য বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে আজ আসতে একটু দেরি হয়েছে। কিছুক্ষণ আগ থেকে আমরা বিক্রি শুরু করেছি। অনেক মানুষ রয়েছে। তারা নিজেরা মারামারি করলে আমরা কি করবো। আমরা বার বার বলছি লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিতে। আর মাস্ক না পরলে পণ্য দেওয়া হবে না। কিন্তু, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। এত লোকের মধ্যে এটা মানা কষ্ট। আমরা পণ্য বিক্রি করবো নাকি কে মাস্ক পরলো সেদিকে নজর দেবো। বিক্রি ভালো হচ্ছে। নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে যদি নিজেরা সচেতন না হয়, তাহলে আমরা কতবার বলে সচেতন করতে পারবো? নিজেদের চিন্তা নিজেদেরই করতে হবে। যদি এখানে পুলিশ মোতায়েন থাকতো তাহলে অনিয়ম হতো না।

এদিকে করোনাকালে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেও তার কোনো দেখা নেই ট্রাকের আশপাশে। এবিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, পুলিশের সহযোগিতার জন্য কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করলে আমাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যাবে।

একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর দয়াগঞ্জে সেখানেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।  

তারা বলছেন, দুই কেজি তেল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজের জন্য দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কোনোও মানে হয় না। এখানে সামান্য কিছু টাকা কমে পণ্য পাওয়া গেলেও, যে সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাতে হয়, তা খুবই কষ্টকর। একই সঙ্গে পণ্য পাবো কিনা তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

পুরান ঢাকার ধোলাইখালেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে টিসিবির পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু নিরাপদ শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। কেউ সঠিকভাবে মাস্ক পরলেও অনেকের মাস্ক ঝুলে ছিল থুতনিতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ালেও পণ্য পাবে কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কায় ছিল অনেকে।

ধোলাইখালে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন ইমন সারোয়ার। তিনি বাংলানিউজকে জানান, সবাই তো বিপদে পড়ে টিসিবির পণ্য কিনতে আসে। দোকানে পণ্যের দাম বেশি। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) পণ্য না পেয়ে ঘুরে গেছি। আজ আবার এসেছি। দুই কেজি তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি ছোলার জন্য দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টির জন্য ট্রাক দেরিতে এসেছে। আরও কত যে সময় লাগবে, জানি না।

চলমান ‘লকডাউন’ ও আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে সোমবার থেকে খোলাবাজারে ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু করছে টিসিবি। সারাদেশে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাকে ৫০০ থেকে ৮০০ কেজি চিনি, ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি মসুর ডাল এবং ৮০০ থেকে ১২০০ লিটার করে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। একজন সাধারণ ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে দুই থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে পারেন। এছাড়া ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি ছোলা ও  ৮০ টাকা কেজি দরে এককেজি খেজুর কিনতে পারেন। আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত টিসিবির এই বিক্রি চলবে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিক্রি হবে না।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল কোম্পানি ভেদে বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭১০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা দরে। খুচরায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা দরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।