ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পর্যটকদের আনাগোনায় প্রাণবন্ত ভাসমান হাট-বাজার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২১
পর্যটকদের আনাগোনায় প্রাণবন্ত ভাসমান হাট-বাজার খালের ভাসমান হাট। ছবি: বাংলানিউজ

ঝালকাঠি:  মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আরোপিত ‘বিধি-নিষেধ’ তুলে নেওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের ভাসমান হাট-বাজারগুলো ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যটকদের সংখ্যাই বেশি।

 

এ পর্যটকদের ঘিরে অনেকটাই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বরিশালের পিরোজপুরের আটঘর-কুড়িয়ানা ও ঝালকাঠির ভীমরুলির ভাসমান বাজার এবং আশপাশের কাদি কাটা পেয়ারা-আমড়া, লেবুসহ বিভিন্ন সবজির বাগানগুলো।

তবে, পর্যটক বাড়লেও এখনো ক্রেতাদের সংকট রয়েই গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। ফলে লেবু ও পেয়ারার মৌসুম চললেও পাওয়া যাচ্ছে না আশাব্যঞ্জক দাম।  

আর স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন, সড়কপথে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে রপ্তানি বাড়বে এবং কৃষকও ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

স্থানীয়রা জানান, লকডাউন তুলে নেওয়ার পর শুক্রবার (১৩ আগস্ট) ভোর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ভাসমান পেয়ারা হাট ও বাগানের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে আটঘর-কুড়িয়ান ও ভীমরুলিতে আসেন। এতে কাঠের নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে জীবন্ত হয়ে ওঠে এসব এলাকার খাল ও শাখা নদীগুলো। তবে, সেদিনও আশানুরূপ দাম ওঠেনি পেয়ারার। স্থানীয় কৃষক উজ্জ্বল জানান, করোনাকালে এ অঞ্চলে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে যায় আর লকডাউনে দূরের ক্রেতা ছিলোই না। স্থানীয় ক্রেতারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়েছেন। তাই দামও ছিলো স্থানীয় ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে।  

এদিকে স্থানীয় পাইকার বিজয় শাওজাল বলেন, ছোট পুঁজি নিয়ে স্থানীয় পাইকাররা ব্যবসা করেন। আর দূরের ব্যবসায়ীদের লগ্নি (সুদ) বেশি থাকে। তাই তারা যেভাবে পণ্য কিনতে পারেন, স্থানীয় পাইকাররা সেভাবে পারেন না। আবার লকডাউনের মধ্যে স্থানীয় পাইকারদের যানবাহন ম্যানেজ করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। সড়ক পথের ঝামেলায় অনেকের পণ্যে মাঝপথেও পচন ধরেছে, লোকসান হয়েছে।

এ করোনার মধ্যে সবমিলিয়ে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে সেটা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে বাজারে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় বেশি তা কেউই কিনতে চায়নি।  

তবে, লকডাউন উঠে যাওয়ায় এখন ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ভাসমান এসব বাজারে আসা কৃষকের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তিন জেলা বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের প্রায় ৫৫ গ্রামে কাদি কেটে বিশেষ ধরনের ফসলের ক্ষেত তৈরি করে পেয়ারার চাষ করা হয়। সেসঙ্গে বোম্বাই মরিচ, লেবু, আমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলেরও আবাদ হয়। আর এসব ফসল আশপাশের ভাসমান হাট-বাজারেই বিক্রি হয়ে থাকে। ফলে এসব অঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষকের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র পর্যন্ত তিনমাস ভাসমান বাজারে পেয়ারার দাপট থাকে। যে কারণে মহামারি আর লকডাউন কাটিয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলিসহ বিভিন্ন খালের ভাসমান হাটে পেয়ারায় সয়লাব।

ভীমরুলির হাটে জাত, আকার ও ধরন বুঝে দেশি পেয়ারা মণপ্রতি তিনশো থেকে ছয়শো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জাত ও সাইজ অনুযায়ী ৮০ পিস লেবু বিক্রি হচ্ছে দেড়শ থেকে চারশো টাকায়। একই ধরনের দামে ভীমরুলির পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারেও পেয়ারা ও লেবু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভাসমান বাজারে এখন আমড়া, বোম্বাই মরিচ, কলা, পেঁপে, কচু, কাঁকরোলসহ বিভিন্ন সবজি পাওয়া যাচ্ছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, চাষিরা যে আবাদে লাভবান বেশি হবেন, তাতেই তো আগ্রহী হবেন। ফলে এ এলাকায় কাদি কেটে পেয়ারা, আমড়া, লেবু চাষে কৃষকরাও ঝুঁকছেন বেশি।

আর এসব দেশীয় ফল, সবজি শুধু খেতেই ভালো তা নয়, প্রচুর পুষ্টিগুণও রয়েছে বলে জানিয়ে নেছারাবাদের কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, উৎপাদিত ফসলের গুণগতমানের জন্য এ অঞ্চলের প্রতিটি বাজার বেশ জনপ্রিয়, সেসঙ্গে দেখার মতোও। গাছপালা ঘেরা শাখা নদী ও খালের ওপর সবুজ ফসলভর্তি নৌকাগুলো দেখলেই প্রকৃতিপ্রেমীর মন মিশে যাবে ঘন সবুজের ছায়ায়।

ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহিম মিয়া বলেন, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পেয়ারার ভরা মৌসুম। তাই এ সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভাসমান পেয়ারা হাট-বাগান ও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে এ অঞ্চলে আসেন। তবে করোনার কারণে এবারে দূরের পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা কম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।