ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দুগ্ধ খামারিদের সংগঠন তৈরি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
দুগ্ধ খামারিদের সংগঠন তৈরি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর

ঢাকা: প্রকৃত দুগ্ধ খামারিদের প্রণোদনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তার অর্থ লুটপাটের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।

সারাদেশে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) কমিটি থাকার পরেও নতুন করে কমিটি গঠনের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।



ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রকৃত খামারিদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।   

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের লাইভ স্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি) প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের জন্য সরকারের সঙ্গে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করেছে বিশ্বব্যাংক। তারই আলোকে গত বছরের জুলাই মাসে ৮১৬ কোটি টাকা (৯৬ মিলিয়ন ডলার) ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।  

এই অর্থের বেশিরভাগই করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের সহায়তায় বিতরণ করা হবে। যাতে খামারিদের গাড়ি ভাড়া করে ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থায় দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করতে পারে।

এছাড়াও সারাদেশে সেলিং সেন্টার, দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন পণ্য তৈরির অত্যাধুনিক যন্ত্র ক্রয় করতে পারে। দেওয়া হবে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় দোকান ও সরকারি জমি।  

আর এসব কিছুই করা হবে সারাদেশের থাকা বিডিএফএর সদস্যদের মাধ্যমে। যাতে প্রকৃত খামারিরা সহায়তা পান। কিন্তু একটি অসাধু চক্র বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ঋণের টাকা লুটপাটের পাঁয়তারা শুরু করেছে।  

বিডিএফএ একটি কমিটি থাকার পরও চলতি বছরের ৮ আগস্ট প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান একটি চিঠি ইস্যু করে মাঠ পর্যায়ে ডেইরি ফামারস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের।  

এ বিষয়ে বিডিএফএর সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডেইরি ফার্মারস কমিটি গঠন করে দিতে পারে না। এটা খামারিদের সংগঠন খামারিদের গঠন করতে দিতে হবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা তড়িঘড়ি করে নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজেদের পছন্দমতো লোক দিয়ে খামারিদের সংগঠন তৈরি করছে। পরবর্তীকালে এটা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হবে।  

জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সচিব স্যার আমাদের একটা নীতিমালা করে দিয়েছেন। প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিল্ক প্রডিউসার (দুধ উৎপাদনকারী) গ্রুপ তৈরি করে দিতে। আমাদের বলা হয়েছে- ওই প্রডিউসার গ্রুপকে যন্ত্রগুলো দিতে। তাই আমরা খামারিদের কমিটি গঠন করে দিয়েছি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে সারাদেশে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের ফলে বাদ পড়েছেন প্রকৃত দুগ্ধ খামারিরা। দেশের একটি জেলায় অধিকাংশ খামারিদের বাদ দিয়ে ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন করায় প্রকৃত খামারিরা বাদ পড়েছেন। এতে তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও সুবিধা হতে তারা বঞ্চিত হবেন।  

এ বিষয়ে প্রকৃত খামারিরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

দেশের একটি জেলায় ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি থাকার পরও নতুন করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকৃত খামারিদের না জানিয়ে ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি একজন ঠিকাদার। তিনি নিজেই প্রকৃত খামারি নন। অন্য পদগুলোতেও যাদের বসানো হয়েছে, তারাও প্রধানত গরুর খামারি নয়।

দুগ্ধ খামারিদের সংগঠন তৈরি করতে চলতি বছরের ৮ আগস্ট একটি চিঠি ইস্যু করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য তিনি তার অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
এসই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।