ঢাকা: ঢাকা শহরের ব্যাচেলারদের খাদ্য তালিকায় প্রধান থাকে ডিম। কলেজশিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মুন্না সোমবার (২২ আগস্ট) নিউমার্কেট কাঁচাবাজার থেকে ডিম কিনেছেন প্রতি হালি ৪৫ টাকা করে।
সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর নিউ মার্কেট, পলাশী, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, হালি প্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা করে।
বাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে কারা
দেশে প্রতিদিন পাঁচ কোটি লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন হয়। এরমধ্যে প্রান্তিক খামারিরা দেশের মোট উৎপাদিত ডিমের ৫০ শতাংশ উৎপাদন করলেও দাম নির্ধারণে কোনো ভূমিকা নেই তাদের। বাকি ৫০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে ১৩-১৫টি বৃহৎ কোম্পানি।
বাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে ১৩-১৫টি বৃহৎ ডিম উৎপাদনকারী কোম্পানি, আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় সাড়ে আট টাকা। কিন্তু ডিমের দাম নির্ধারণে সমন্বিত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বৃহৎ কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মতো ডিমের দাম নির্ধারণ করে।
তাদের অভিযোগ, কোম্পানি নির্ধারিত দরে আড়তদাররা ডিম কিনলেও খামারিদের কম দাম দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে দেওয়া হয় না কোনো ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদও।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, কারওয়ান বাজারে আড়তদাররা নয় টাকা ৭০ পয়সা দামে ডিম কিনলেও খামারিরা পেয়েছে আট টাকা ৬০ পয়সা।
বাকি এক টাকা ১০ পয়সা অতিরিক্ত কার পকেটে গেল এর জবাবে অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যেক আড়তদারের বিভিন্ন এলাকায় ডিলার থাকে। ডিলাররা এ এক টাকা ১০ পয়সা লাভ করে।
অন্যদিকে আড়তদার থেকে খুচরা বিক্রেতারা ডিম কিনে নিয়ে বিক্রি করছে ১১ টাকা করে। ডিম প্রতি তাদের লাভ হচ্ছে এক টাকা ৩০ পয়সা।
ফলে খামারি পর্যায়ে ডিম উৎপাদনে নয় টাকা ২০ পয়সা খরচ হলেও তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে আট টাকা ৬০ পয়সা। লাভের বদলে তাদের প্রতি পিস ডিমে লোকসান ৬০ পয়সা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদারের দাবি, নয় টাকা ৫০ পয়সা যেন খামারিরা পায় সে বন্দোবস্ত করা।
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে কী বলছেন খামারিরা
চাহিদার তুলনায় ডিম সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে ডিমের দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রশাসনের চাপাচাপি ও চাহিদা পড়ে যাওয়ায় তারা ডিমের দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন উল্লেখ করে খামারিরা বলছেন, পোলট্রি খাত এখন ধ্বংসের মুখে। আগামীতে মধ্যস্বত্বভোগী কোম্পানির হাতে চলে যাবে ডিমের কর্তৃত্ব। তখন মানুষ তাদের নির্ধারিত দামেই ডিম কিনতে বাধ্য হবেন।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, গত ছয় থেকে সাত মাসে পোলট্রি খাদ্যের দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বেড়েছে ওষুধের দাম। বড় শিল্পপতিরা ‘সিন্ডিকেট’ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
খাদ্যের দাম এক টাকা কমালে ডিমের দাম ৫০ পয়সা কমিয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মত বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের।
বছরখানেক আগে ৭০ হাজার মুরগি ছিল পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের খামারি ফরমান আলীর। এখন তার মুরগি আছে ২০ থেকে ২৫ হাজার।
ফরমান আলী বলেন, ২০১৭ সালে তিন টাকা ১০ পয়সা করে তাদের ডিম বিক্রি করতে হয়েছিল। তারা ডিম ভেঙে প্রতিবাদ করেছেন কিন্তু গণমাধ্যমে সেভাবে তা আসেনি।
অন্যদিকে ঢাকায় আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা প্রতি ডিমে তিন থেকে চার টাকা লাভ করেন বলে অভিযোগ প্রান্তিক খামারিদের।
ডিমের দর বাড়ার বিষয়ে কী বলছেন আড়তদাররা
রাজশাহী শহরের একাংশসহ পবা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া ও চারঘাট উপজেলার কিছু এলাকার খামারিদের ডিমের আড়ত বাইপাস সড়কের মোসলেমের মোড়ে। ‘মোসলেমের মোড় ডিম আড়ত সমিতি’ সারা দেশের সঙ্গে মিল রেখে ডিমের দাম নির্ধারণ করে।
সমিতি সূত্র বলছে, গত ছয় থেকে সাত মাসে মুরগির খাবারের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজির) প্রায় এক হাজার টাকা বেড়েছে। এরপর থেকে খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ অঞ্চলে প্রায় ১৭ লাখ ডিমপাড়া মুরগি ছিল। এখন তা নেমে এসেছে আট থেকে নয় লাখে।
মোসলেমের মোড় ডিম আড়ত সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন জানান, ডিমের সরবরাহ যখন কমে যাওয়ায় ঢাকা, সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসতে থাকে, ডিম লাগবে। চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বেড়ে যায়। এর সঙ্গে তেলের দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
এনবি/আরবি