জাবি: বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘শিক্ষক সমাজ’ ও উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফলে অধিকাংশ বিভাগের নিয়মিত ক্লাশ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগের দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট ও উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরা।
উপাচার্যকে অবরোধের জন্য উপাচার্য কার্যালয়ের করিডোরে অবস্থান নেন তারা। সে সময় উপাচার্য কার্যালয়ে না থাকায় তারা বেলা ১২টা পর্যন্ত সেখানেই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত ‘উপাচার্য প্রত্যাখ্যান মঞ্চে’ সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহম্মদ কামরুল আহছান উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার অনুগত বাহিনী আমাদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন। আমাদের উপাচার্য নির্বাচনের দাবির সঙ্গে তারাও একমত পোষণ করেছেন। এক সময় তারা আমাদের আট দফা দাবি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তারা বুঝতে পেরেছেন আমাদের দাবি যৌক্তিক। তাই তারা আমাদের দাবি সঙ্গে একমত হয়েছেন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির সঙ্গে তারা একমত পোষন করেননি। কিন্তু এ কথা সত্য যে শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা প্রথমে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির সিদ্ধান্ত নেননি। পরে উপাচার্যের কর্মকাণ্ডের ফলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করতে বাধ্য হয়েছেন। ’
তিনি উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি সরে যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরে আসুক। ’
দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের কথা তুলে ধরে সমাবেশে মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ জন শিক্ষক আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ক্লাশ না নিয়ে আগে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। ’
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য প্রায় ১০ দিন ধরে নিজের কার্যালয়ে আসছেন না। ‘
বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আর দেরি না করে আপনি পদত্যাগ করুন। উপাচার্য নির্বাচন দিয়ে ৭৩ অধ্যাদেশ সমুন্নত রাখুন। ’
বুধবার সকালে চলমান এ সর্বাত্মক ধর্মঘট ও উপাচার্য অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন, এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন, সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন, সহযোগী অধ্যাপক এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, আনিছা পারভীন জলি প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকদের সর্বাত্মক ধর্মঘট ও উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে অবরোধ কর্মসূচি চলবে। এর মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে শনিবার থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘটসহ প্রশাসনিক ভবন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অবরোধ করা হবে বলে এ ব্যানারের শিক্ষকরা জানান।
অপরদিকে, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষক ব্যানারের উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা।
বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অধ্যাপক ড. আফসার আহমেদ বলেন, শিক্ষক সমাজের শিক্ষকদের উপাচার্য নির্বাচনের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিটি অযৌক্তিক। ৭৩ এর অধ্যাদেশ সমুন্নত রাখতে উপাচার্য নির্বাচন দেওয়া উচিত। কিন্তু এই নির্বাচন উপাচার্যের মাধ্যমেই হবে। এজন্য উপাচার্যের উচিত শিক্ষকদের সহযোগিতা করা।
একই দাবিতে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার মৌন মিছিল করবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে থেকে মৌন মিছিলটি শুরু হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. অসিত বরণ পাল।
এদিকে, শিক্ষক সমাজ ও উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে নিয়মিত ক্লাশ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে স্বাভাবিক গতিতে। শিক্ষক সমাজের উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও এবং সমাবেশ কর্মসূচির কারণে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়েনি। বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস ও পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নিয়মিত ক্লাশ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যখন শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা আন্দোলন করতেন, তখন কিছু শিক্ষক ক্লাশ পরীক্ষা নিতেন। এখন তারাও আন্দোলন করায় নিয়মিত ক্লাশ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্যা সমাধান করে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের উচ্চ মহলের কাছে অনুরোধ জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১২
প্রতিবেদন: ওয়ালিউল্লাহ
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর