ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

র‌্যাগিংয়ের শিকার হলে আমাকে ফোন দেবে: নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শাবি উপাচার্য

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
র‌্যাগিংয়ের শিকার হলে আমাকে ফোন দেবে: নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শাবি উপাচার্য

শাবিপ্রবি, (সিলেট): ‘নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিলবোর্ড দিয়ে জানানোর চেষ্টা করেছি র‌্যাগিং (পরিচয় পর্ব) একটা ঘৃণ্য জিনিস। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ, এ অপরাধ যারা করবে তাদের আমরা ছাড় দিচ্ছি না।

আমরা যখন আসি ২০ দিনের মাথায় ২২ জনকে বহিষ্কার করেছি।  তাই তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা তোমাদের র‌্যাগিং করার চেষ্টা করবে। তোমাদের গেইটে, মেসে কিংবা কোনো রুমে আসতে বলবে, তবে তোমরা যাবে না। এমন কিছু ঘটলে সাথে সাথে ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর অথবা দেওয়া নাম্বারে ফোন দেবে। র‌্যাগিংয়ের শিকার হলে প্রয়োজনে সরাসরি আমাকে ফোন দেবে। ’

এই র‌্যাগিং আমাদের শিক্ষার্থীদের ট্রমাটাইজ করে, তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে, এ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। তাই একজন শিক্ষার্থীও যাতে র‌্যাগিংয়ের শিকার না হয় সেজন্য আমরা সজাগ আছি। তবে তোমরা সাবধান থাকবে, তোমাদের সিনিয়ররা পরিচয়ের নাম করে তোমাদের ডাকবে, তাতে সাড়া দেবে না।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ও বিকেল দুই সেশেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২১-২২ সেশনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ মন্তব্য করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

নবীনদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, আজকের পর থেকে তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পথচলা শুরু। এখান থেকেই তোমাদের স্বপ্নপূরণে প্রস্তুত হবে। তোমাদের সে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণায় ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে দেশের মধ্যে অনন্য অবস্থানে আছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমরা প্রথম, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্য তৃতীয়। আগামীতে আমরা প্রথম হব। আমরা এখন গুণগত শিক্ষার দিকে জোর দিচ্ছি। পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত একটি পরিবেশ রয়েছে। আশা করি সে সুযোগকে তোমরা কাজে লাগাবে।

তিনি আরও বলেন, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই স্বাধীন। তবে স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। স্বাধীনতার সঙ্গে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, তাই সবকিছুই শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেই করতে হবে। স্বাধীনতা পেয়ে যেভাবে খুশি সেভাবে কাজ করলে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।

আবাসন সংকটের কথা উল্লেখ্য করে উপাচার্য বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক না হওয়ায় আমরা চেষ্টা করছি এ সমস্যা সমাধান করতে। কয়েক বছর পর আমরা আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হব। বর্তমানে পাঁচটি হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা থাকছে। ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল হয়ে গেলে শতভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী এবং কয়েক বছর পর ৮০ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারবে।

মাদক সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদককে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স। তাই তোমাদের প্রতি আহ্বান, কারো প্ররোচনায় পড়ে মাদকে নিজেদের জড়াবে না। এ ফাঁদে একবার পড়ে গেলে আর বেরোতে পারবে না। এটা তোমাদের সুন্দর জীবনকে ধ্বংস করে দেবে।

তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি মানবিক বিশ্ববিদ্যালয়। করোনাকালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবতার নজির সৃষ্টি করেছে। তাই তোমরা মানবিক হও, তোমাদের কাজের মাধ্যমে সে মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। তোমরা ভালো কাজ কর, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হও। দেশ আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে, এখন দেশকে আমাদের দেওয়ার সময়।

সকালে ‘এ’ ইউনিটের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহনাজ শিমুল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. সিয়ামুল বাশারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের পরিচিতি তুলে ধরেন স্কুল অব ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো রাশেদ তালুকদার স্কুল অব এপ্লাইড সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম, স্কুল অব লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. কামরুল ইসলাম, স্কুল অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার সরকার।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত ইবনে ইসমাইল।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজলুর রহমান বক্তব্য দেন। নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার এবং আলী আশরাফ তানভীর।

বিকেলের সেশনে ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কৃত্তিবাস পাল এবং ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহাবুবা রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক দিলারা রহমান, স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিন অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।

নবীনদের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণ করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সিদ্দিকা, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নোমান আহমদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।