ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সোমবার থেকে সকাল-সন্ধ্যা জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ-শিক্ষক ধর্মঘট

জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১২
সোমবার থেকে সকাল-সন্ধ্যা জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ-শিক্ষক ধর্মঘট

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগের দাবিতে ২৩ এপ্রিল সোমবার থেকে ৩০ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা উপাচার্য কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও শিক্ষক ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরা।

শনিবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপিত ‘উপাচার্য প্রত্যাখ্যান মঞ্চ’-এ তারা এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।



এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্যকে অবরোধ ও শিক্ষক ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেন ‘শিক্ষক সমাজ’-এর ব্যানারের শিক্ষকরা। যদিও উপাচার্য সে সময় তার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না।

শিক্ষক ধর্মঘট ও উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্যকে অবরোধ কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপিত ‘উপাচার্য প্রত্যাখ্যান মঞ্চ’ এ সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের আহ্বায়খ অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর থেকে ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসকে নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বানানোর লড়াই করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের কাছে জুবায়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আরও কিছু ন্যায্য দাবি দাওয়া উত্থাপন করেছে- ‘শিক্ষক সমাজ’।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, শান্তিপূর্ণ এই টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাধিকবার আলোচনায় বসেছে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে। একাধিকবার মোখিক সমঝোতার পরও তা লঙ্ঘন করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলার স্বার্থে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষে এবং সাধারণভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে কার্যকরী করার উদ্দেশে নিয়ে শিক্ষক সমাজ সংগ্রামরত আছে।

শিক্ষক সমাজ ব্যানারের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘১০ এপ্রিল থেকে আমরা উপাচার্য অফিস অবরোধ করে আসছি। কিন্তু এই কয়েকদিনর মধ্যে একদিনও তিনি অফিসে আসেন নি। আর উপাচার্য অফিসে না আসলে কী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম চলে? তিনি অফিসে আসেন না, তাহলে তিনি অফিস করেন কোথায়? কাজ না করে তিনি কীভাবে উপাচার্য পদে থাকবেন?’

শিক্ষক ধর্মঘট ও উপাচার্যকে অবরোধ কর্মসূচি এবং সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন- ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এমএ মতিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন, সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক শরিফ উদ্দীন, সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন, আনিছা পারভীন জলি প্রমুখ।

২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার লক্ষ নিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাহীন গণনিয়োগের বিরোধিতা ও গণনিয়োগ বাতিলের দাবি করে আসছিলেন।

পরবর্তীতে গত ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের হাতে খুন হওয়ার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরাও প্রতিবাদ করেন এবং বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষক ও ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুবায়ের আহমেদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার করে।

পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেলেও মেধাহীন ও গণনিয়োগের প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

সেই আন্দোলনই পরবর্তীতে উপাচার্য পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।  

‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, সন্ত্রাস বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা, সন্ত্রাসীদের লালন-পালন, পৃষ্ঠপোষক, অছাত্র সন্ত্রাসীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর সুযোগ দেওয়া সর্বোপরি প্রশাসনের মদদ দান বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনকে লাঞ্ছনার বিচার, সব শিক্ষার্থীর সহঅবস্থান নিশ্চিতকরণ, গণনিয়োগ বন্ধ ও রিভিউ কমিটির মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল, ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অপতৎপরতা বন্ধ করা, বিভিন্ন পর্বে ভর্তি ব্যয়, পরীক্ষা ও উন্নয়ন ফি বৃদ্ধি বন্ধ করা ও ৭৩-এর অধ্যাদেশ পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষে উপাচার্য প্যানেলসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে (ডিন, সিন্ডিকেট, সিনেট ও রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট) বিধি মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সমুন্নত রাখা।

এদিকে, ক্যাম্পাসে চলমান এ আন্দোলনের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে এ সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. জিল্লুর রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।