ইবি: মধ্যরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য ও তার দুই সহযোগী এ ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান মিল্টন।
তিনি বলেন, ঘটনার দেড় ঘণ্টা আগে বুকে ব্যথার চিকিৎসা নিতে আসেন কাব্য। তাকে প্রাথমিকভাবে প্রথমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে এর আধা ঘণ্টা পর আবার এসে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে চান কাব্য। এসময় অ্যাম্বুলেন্স কেন দ্রুত দেওয়া হচ্ছে না এ নিয়ে ভাঙচুর চালান তিনি এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন।
এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সকালে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টরসহ অনেকেই এসেছিলেন। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি। তারপর প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।
চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, রাত ১০টার দিকে বুকে ব্যথা নিয়ে কাব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন৷ পরে চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ব্যথার ইনজেকশন দিলে কাব্য চলে যান।
কিন্তু এর ঠিক আধা ঘণ্টা পর আবার কাব্য ও তার সহযোগীরা চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন এবং কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা চান। পরে চিকিৎসক ছাত্র সংশ্লিষ্ট ঘটনা দেখে তাকে কুষ্টিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে, অ্যাম্বুলেন্স দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালান কাব্য। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়া পাঠানো হয়।
এদিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সেলিম প্রশাসন ভবনের সামনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় তাদের সঙ্গেও কাব্য খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন তারা। একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে তাকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, মেডিকেলে কাব্য জোর করে ডাক্তারের রেফার নিয়েছিল। তাই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসন ভবনের দিকে আমরা তাকে বাধা দিলে আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে সে।
চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য। তিনি বলেন, প্রচণ্ড বুকের ব্যথা নিয়ে গেলেও ডাক্তার আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না৷ তিনি চেম্বারে শুয়ে ছিলেন। পরে ফ্রেশ হয়ে আসতে দেরি করেন তিনি। এসময় আমার পায়ে ধাক্কা লেগে টেবিল-চেয়ার পড়ে যায়।
এদিকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দিলেও কাব্য কুষ্টিয়া যাননি বলে নিশ্চিত করেন
অ্যাম্বুলেন্সের চালক শাহীন। তিনি জানান, কাব্য কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা করলেও পরে মধুপুর লক্ষ্মীপুর বাজারের একটি ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ কিনে আবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিএম ছাত্রাবাসে ফিরে আসেন।
এদিকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে না গিয়ে মধুপুরে নেমে যান কাব্য। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সময় আমার ব্যথা কিছুটা কমে যায়। তখন একটা ফার্মেসি খোলা দেখি। তারপর সেখান থেকে কিছু ওষুধ নিয়ে আবার ফিরে আসি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি সকালেই চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। পরে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার স্যারও এসে দেখে গেছেন। এরপর ইবি থানার ওসিকে জানানো হলে, তিনি পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত করছেন।
তিনি আরও বলেন, মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
গত বছর ১৮ জুলাই রাতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন কাব্য। একটি গাড়ির চালককে ছুরি দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন তিনি। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় চালক ও তার সহকারীকে মারধর করে মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন কাব্য ও তার সঙ্গীরা। পরে এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারের সামনে সাংবাদিকদের পেটাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন কাব্য। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। এদিকে ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হন কাব্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
এসআই