ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

সুইসাইড নোট লিখে ইবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ইবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৪
সুইসাইড নোট লিখে ইবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা আদনান ফেরদৌস

ইবি (কুষ্টিয়া): সুইসাইড নোট লিখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান ফেরদৌস আত্মহত্যা করেছেন।  

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে নিজ বাসা মানিকগঞ্জে তিনি আত্মহত্যা করেন।

 আদনান মানিকগঞ্জের ইসমাইল হোসেনের ছেলে।  

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, আদনান ইবির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আদনান প্রথমে ভর্তি হন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ইবির ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে। পরে দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। কিন্তু প্রথম বর্ষে ইয়ার ড্রপ করলে আদনান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস করেন। সর্বশেষ তিনি ওই বর্ষে পরীক্ষার ফর্মও পূরণ করেন। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় বিভাগে পড়াশোনা স্থগিত করে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার কথা ভেবে চার-পাঁচ মাস আগ থেকে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করেছেন। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) একটি সুইসাইড নোট লিখে নিজ বাড়িতে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহনন করেন তিনি।  

সুইসাইড নোটে আদনান লেখেন, ‘খুব সম্ভবত এই পৃথিবীতে আজকে আমার শেষ দিন। সবকিছু কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হয় কোনো কিছুর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে কখনোই গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারি নাই। আজকেও হয়তো গুছিয়ে কিছু লিখতে পারবো না। শুধু দিন শেষে এইটুকুই উপলব্ধি করতে পারলাম মানুষ হিসেবে আমি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অতল এক গহ্বরে। আমি নিজে মানুষ হিসেবে কেমন তা জানি না। হয়তো অনেক আরাপ নয়তো ভালো। তবে একটা বিষয় একেবারে শিউর যে আমি আমার আশেপাশের সবার জন্য একটা বোঝা। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখছিলাম কিছু, কীসের জন্য যেন সবকিছু খাপছাড়া লাগে। কীসের অভিশাপে যে অভিশপ্ত এর উত্তর হয়তো কখনই জানা হবে না। ‘আমি হাত দিয়ে যা ছুঁই, তাই দুঃখ হয়ে যায়’ এই লাইনটা বোধহয় আমার জন্যই।

সবশেষে এইটাই উপলব্ধি করতে পারলাম যে, কারও সমস্যার কারণ বা সবার বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো। জানি না মৃত্যু আমাকে সাদরে গ্রহণ করবে কিনা, তবুও আমি আশাবাদী। এই ছোট্ট জীবনে যদি আমার আচরণে বা ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন আশা করি। সবাই ভালো থাকবেন। ওহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী’ এই বাস্তবতা আমার দরকার নাই। এই বাস্তবতা থেকে আমি মুক্তি চাই। বাস্তবতার বেড়াজালে আর আটকে থাকতে চাই না। আমার লাশ পোস্টমর্টেম না করার জন্য অনুরোধ রইল। ’

আদনানের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, আদনান দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তার চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু গতকাল হঠাৎ সে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে। এ সময় তিনি সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া কামনা করেন।

এদিকে, আদনানের অকালমৃত্যুতে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, আদনান অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর থেকে তাঁর বাবার অনুরোধে আমি তাকে কাউন্সেলিং করতাম। আজ হঠাৎ তার মৃত্যুর সংবাদে আমরা ট্যুরিজম পরিবার খুবই মর্মাহত। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।