ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কলেজ প্রতিষ্ঠাতা দেখিয়ে আওয়ামী ঘরনার ব্যক্তিকে সভাপতির প্রস্তাব ইউএনওর

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
কলেজ প্রতিষ্ঠাতা দেখিয়ে আওয়ামী ঘরনার ব্যক্তিকে সভাপতির প্রস্তাব ইউএনওর

চাঁদপুর: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত করতে প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারকে ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেখিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কলেজ সভাপতি ও মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা।  

প্রস্তাবিত ওই ব্যক্তি বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন মর্মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ একাধিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

সরেজমিন সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজে গিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুব্রত দাস, কলেজের শিক্ষক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমার সঙ্গে কথা বলে সভাপতির নাম প্রস্তাবসহ নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে গত ৪ নভেম্বর ইউএনও একি মিত্র চাকমার বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরির্দশক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন কলেজের সদস্য সচিব ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুব্রত দাস।

অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, ইউএনও একি মিত্র চাকমা এডহক কমিটির সভাপতি পদে প্রস্তাবনা পাঠানোর পূর্বে সংশ্লিষ্ট কারও থেকে কোনো পরামর্শ নেননি। কলেজের নিজস্ব ই-মেইলের  পাসওয়ার্ড জোরপূর্বক নিয়ে এবং হুমকি-ধামকি দিয়ে প্রস্তাবনার খালি ফরমে স্বাক্ষর নিয়েছেন ইউএনও।

অভিযোগের ওই কপিসহ ইউএনও’র পক্ষ থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেখিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো সভাপতি মনোনয়নের জন্য প্রস্তাবনাপত্র এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সদস্য সচিব সুব্রত দাস কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রস্তাবিত যে ফরম ইউএন ‘র  কাছে জমা দিয়েছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়নি। ইউএনও নিজেই কলেজের ই-মেইলের পাসওয়ার্ড রেখে নিজের ইচ্ছেমতো প্রস্তাবিত ফরমে প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারের নাম ক্রমিক ১ নং - এ প্রস্তাব করেন। যা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ২ নভেম্বর দুপুরে ই-মেইল চেক করে জানতে পারেন। পরদিন ৩ নভেম্বর বিকেলে দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমোদন হয়ে এসেছে কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি দেওয়া হয়েছে প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারকে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার একজন একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ ঘরনার ব্যক্তি। তিনি বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ওপরে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন এবং অনলাইনে টকশোতে অংশগ্রহণ করতেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি নিজেকে বিএনপির একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেন।

প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারের মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে কলেজের পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা স্ব-প্রণোদিত হয়ে প্রস্তাব করেন।  
কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে এডহক কমিটির সভাপতি পদ থেকে বাদ দিয়ে প্রস্তাবনা পত্রের দুই নম্বর ক্রমিকে থাকা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন করার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।

এই বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুব্রত দাসকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হলে তিনি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। বক্তব্য না দিয়ে তিনি নিজ কক্ষ ছেড়ে চলে যান।

কলেজের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে,  কলেজের একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা হলেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আছেন এমন তথ্য ও নথিপত্র কোথাও নেই।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দপু মনির বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি এবং ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগের জন্য তিনজনের প্যানেল সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাছাড়া আওয়ামী সরকারের নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ছিলেন।

ইউএনও’র পাঠানো প্রস্তাবিত ফরমে কলেজের ‘প্রতিষ্ঠাতা সদস্য’ হিসেবে দেখানো হয়েছে বিষয়টি সত্য কিনা এমন প্রশ্নে এডহক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার জানান, তিনি সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য না। তবে তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারি নানা কর্মসূচিতে জড়িত ছিলেন।  

দীপু মনির সঙ্গে তারা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা বলেন, এডহক কমিটির সভাপতি প্রস্তাবনা পাঠানোর ক্ষেত্রে আমি গোপনীয়তা রক্ষা করেছি।  

তবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সদস্য সচিবের কোনো ধরনের পরামর্শ নিয়ে খালি ফরমে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

এডহক কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সদ্য মনোনীত হওয়া ব্যক্তি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে সদস্য হিসেবে দেখালেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নয়, এই বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। এটির জন্য আমি আবারও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর সংশোধনী পাঠাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।