ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১২
আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলকে ছাত্রলীগের ধাওয়া ও অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা।

দিনব্যাপি ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের এবং ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা ছিলেন আতঙ্কে।



শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিট গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের পরীক্ষা।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা পর বেলা পৌনে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানাতে জাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ক্যম্পাসে প্রবেশ করে। এ সময় জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল্লাহর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।

পরবর্তীতে ছাত্রদল নেতা কর্মীরা সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় একটি যাত্রিবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৫ জন।

প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, রেডিও কলোনিতে ছাত্রদলের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রদল কর্মী পেট্রোল ঢেলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। এ সময় মহাসড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

এদিকে দুপুর দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হল ও মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা ও সহকারী প্রক্টররা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, ট্যান্টে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ শুরু হয়। শহীদ রফিক জব্বার হলের ছাত্রলীগ নেতা মিঠুন কুন্ডুর অনুসারী আব্দুল মাজিদ সীমান্তকে মারধর করে মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মী নূরনবী। এরপর মিঠুন কুণ্ডু শতাধিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে নিয়ে মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে। পরে মওলানা ভাসানী হলের নেতা-কর্মীরা শহীদ রফিক জব্বার হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে।

এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় শহীদ রফিক জব্বার হলের সীমান্ত, লিংকন, মনির ও শামীম আহত হয়। এদিকে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিঠুন কুণ্ডু আহত হয়েছে। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন হলে অবস্থানরত ভর্তিচ্ছুদের মনে আতংক বিরাজ করে। এদিকে দুপুরে বটতলায় অভিভাবকরা খেতে এলে ধাওয়ার পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় তারা বটতলা ছেড়ে চলে যায়।

যে কোনো মুহূর্তে সংঘর্ষ বাধতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, সকাল থেকেই ছাত্রদল অছাত্র ও বহিরাগত নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল।

এ ঘটনায় জাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভুঁইয়া বলেন, ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগ অস্ত্রসহ হামলা করেছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।

জাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহবস্থানের কথা বলা হলেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলে হামলা চালিয়েছে। প্রশাসন এক্ষেত্রে নির্বিকার ভূমিকা পালন করেছে।

জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল বলেন, ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল কর্মীরা ষড়যন্ত্র করছে।

সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বাসে আগুন দিয়েছে বিষয়টি জানার পর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়।
    
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। যে কোন প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে জানানো হয়, শনিবার অনুষ্ঠিত ‘এ’ ইউনিট গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের পরীক্ষায় প্রায় ৩১ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। চলতি শিক্ষাবর্ষে ২ লাখ ২০ হাজার ৯শ ১৭ জন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে এবার ১৭৯৭ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক, উপজাতি, প্রতিবন্ধী কোটায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সিট রয়েছে ২২৯টি।

রোববার অনুষ্ঠিত হবে ‘ডি’ ইউনিট জীববিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরিক্ষা। এছাড়া ১৫ অক্টোবর আই আই টি ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৬ অক্টোবর আইন ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, ১৭ অক্টোবর আইবিএ-জেইউ এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাংলা বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ অক্টোবর কলা ও মানবিকী অনুষদের সাংবাদিকতা ও গনমাধ্যম অধ্যায়ন, দর্শন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং চারুকলা বিভাগ। ২০ অক্টোবর একই অনুষদের রয়েছে ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১২
ওয়ালিউল্লাহ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।