রাবি: খাবারের বাকি টাকা পরিশোধ করতে বলার অপরাধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়েছে এক ছাত্রলীগ নেতা। একই কারণে ক্যান্টিন ম্যানেজারকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ওই নেতা।
নাসিম আহম্মেদ সেতু নামে ওই ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপপাঠাগার সম্পাদক।
জানা গেছে, শনিবার রাতে ছাত্রলীগ নেতা সেতুর কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে ম্যানেজার শফির ওপর চড়াও হন সেতু। এক পর্যায়ে তিনি ক্যান্টিনও বন্ধ করে দেন। পরে ম্যানেজারকে হত্যারও হুমকি দেন তিনি।
জানা গেছে, শুধু বঙ্গবন্ধু হলেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হলেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বাকি ও ফাও খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
হল সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকার খাবার বাকি খেয়েছেন।
এব্যাপারে ছাত্রলীগের ওপর মহল ও হল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো সমাধান মেলেনি বলেও অভিযোগ করেন ক্যান্টিন ম্যানেজার শফি।
গত শনিবার রাতে হল গেটে সেতুর সঙ্গে ক্যান্টিন ম্যানেজারের দেখা হলে শফি তার পাওনা টাকা ( ১ হাজার ৮শ ৮১ টাকা) চান। এতে সেতু ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর চড়াও হন এবং ক্যান্টিন বন্ধ করে দেন।
এছাড়াও ক্যান্টিন ম্যানেজার শফি আওয়ামী লীগ কর্মী না হলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হতো বলেও সেতু হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু সেতু নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যে কোনো নেতা হওয়া মানেই ফাও ও বাকি খাওয়ার সুযোগ খুলে যাওয়া।
আরও জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসারত) ওই হলের ক্যান্টিনে বাকি খেয়েছেন ৪ হাজার ৮শ ৭০ টাকা, যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম ৭ হাজার ৫শ ৬৬ টাকা, যুগ্ম সম্পাদক এমবি আমিন ৩ হাজার ৮শ ৫৩ টাকা, বঙ্গবন্ধু হলের আহ্বায়ক শাহ মুহাম্মদ সেলিম ১১ হাজার ৯শ ৭৬ টাকা, সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহিম সোহেল ৫ হাজার ৩শ ৭৫ টাকা, সাকিলার রহমান সোহাগ ৪শ ৬০ টাকা, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রাহাজুল আমিন হৃদয় ৩ হাজার ৫শ ৭৯ টাকা, প্রচার সম্পাদক আনজির লিটন ৭শ ৪০ টাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক জাকির ৫শ ১৮ টাকা, মতিহার হল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ ২ হাজার ৫শ ৪২ টাকা, ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম (শের-ই-বাংলা হল) ১ হাজার ৩৬ টাকা, রনি ৫শ ৬০ টাকা, বেলাল হোসেন বিল ৭শ ৫৯ টাকা, ফারুক ৪শ ২০ টাকা এবং তারেক ৩শ ২০ টাকা ওই হলের ক্যান্টিনে বাকি খেয়েছেন বলে জানা গেছে।
শুধু বঙ্গবন্ধু হলের ক্যান্টিনেই নয়, সব কয়টি আবাসিক হলেই এবং ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী এলাকার দোকানগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লক্ষাধিক টাকা ফাও এবং বাকি খেয়ে আসছেন। আর পাওনা টাকা পরিশোধ করতে বলা হলেই দোকান বা ক্যান্টিন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাকি টাকা চাওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে ইতোপূর্বে দুই ডজনেরও বেশি দোকান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু হলের ক্যান্টিন ম্যানাজার শফি বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদের সেবা করার জন্য ক্যান্টিন চালাচ্ছি। সেবা করতে এসে ছাত্রলীগকে বাকি খাইয়ে সেই টাকা চাইতে গেলে টাকা না দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমার ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়েছে তারা। ”
তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সেতু হত্যার হুমকির কথা অস্বীকার করে বলেন, “টাকার বিষয় নিয়ে ক্যান্টিন ম্যানজারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে মাত্র।
বঙ্গবন্ধু হল প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এস এ হায়দার বলেন, “বিষয়টি জানার পর উভয়ের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়া হয়েছে। ক্যান্টিন চালানোর ব্যবস্থাও করা হবে বলে ড. হায়দার উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১২
সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর