ঢাকা: ২৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯টা। বর্ণিল ভাবে সাজানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র(টিএসসি)।
আর এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো টিএসসিতে বসেছে যেনো নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। বহুদিন পর সাক্ষাতে একে অপরের সঙ্গে আবেগঘন মুহূর্ত ও ভালবাসায় জড়িয়ে পড়েন তারা। দুপুরে শুরু হয় গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠান। সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত ।
তবে সহপাঠী হিসেবে নয়, কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকদিন পরে বন্ধুকে পেয়ে। আবার অনেক সিনিয়র অ্যালামনাই নিজেরাই জুনিয়রদের কাছে পেয়ে পরিচিত হচ্ছেন। জেনে নিচ্ছেন কে কোথায় আছে। নিজে থেকেই বলছেন তোমরা যোগাযোগ রেখো। এ যেনো জুনিয়র জন্য এক অনন্য পাওয়া।
একইভাবে জুনিয়র অ্যালামনাইরা সিনিয়রদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। পুনর্মিলনী জুনিয়রদের তাদের সঙ্গে পরিচিত হবার যেনো বড় সুযোগ করে দিল। এ আয়োজনে উচ্চ পর্যায়ের আমলারা যেমন এসেছেন, তেমনি এসেছেন রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার সঙ্গে যুক্ত সব অ্যালামনাই। সবাই দিনটি স্মরণীয় রাখতে ছবি উঠছেন।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবী ফোরামের প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. গিয়াস উদ্দীন মোল্লা ড. নূরুল আমিন বেপারী, ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী, ড. জিন্নাত আরা নাজনীন, সোহরাব হোসেন, সরকারের যুগ্ম সচিব কাজল ইসলাম, পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের উপ পরিচালক নাসরিন পারভীনও ছিলেন এ দলে। তবে পার্থক্য একটাই এ আয়োজনে ছিলনা কোনো রাজনৈতিক আলোচনা।
আর এ বছর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঁচজনকে গুণীজন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানকে অন্য রকম মাত্রা দেয়। সম্মাননা দেওয়ার আগে এ ৫ গুণীর বিশেষ কৃতিত্ব যখন মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল তখন সবাই ভাবছিল উনিও আমাদেরই লোক। আর তাদের স্মৃতিচারণা ছিল অনেক উপভোগ্য আর শিক্ষনীয়।
এ বছর ভাষা আন্দোলন, দেশের প্রশাসন ও সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সাবেক কমনওয়েলথ সেক্রেটারি এম মোখাম্মেল হক, প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্রীড়া এবং রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য টিআইবির ট্রাস্টি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, দেশের মুক্তিযুদ্ধ রাজনৈতিক উন্নয়ন সংসদীয় রাজনীতি ব্যবসায় সমাজসেবা ক্রীড়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী আওয়ামীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল জলিল এবং মুক্তিযুদ্ধ, ক্রীড়া ও সামগ্রিক উন্নয়নে কৃতী খেলোয়াড় এ এস এম রকিবুল হাসানকে সম্মাননা জানানো হয়।
ডুপডা সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ডুপডা সাধারণ সম্পাদক এ কে এম নুরুর রহমান নান্টু।
ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, সরকার ও বিরোধীদলকে একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। তা না দেশের উন্নয়ন হবে না। তিনি গবেষণার মধ্য দিয়ে জাতিকে পথ দেখানোর জন্য এলামনাই সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. আব্দুল জলিল বলেন, দেশে গণতন্ত্রের কোন চর্চা নেই। কারণ, গণতন্ত্রের অর্থ হল সহনশীলতা। সেটা এখানে নেই। এদেশে এখন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নেই। যার কারণে বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এই পর্যায়ে। বর্তমানে রাজনীতিবিদরা একে অপরকে সম্মান করছেন না। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না।
সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যালামনাইদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
দুপুরের খাবার শেষে শুরু হয় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। এসময় বিভাগের সিনিয়র এলামনাই সদস্যরা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসময় দেশবরণ্য শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
পুনর্মিলনীতে অংশ নেওয়া ১৯৯৯-২০০০ ব্যাচের(অনার্স-২০০৩) ছাত্র, বর্তমানে বাংলালিংকে কর্মরত মিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সত্যিই এ আয়োজনে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। সিনিয়র জুনিয়র অ্যালামনাইদের মাঝে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে তা সত্যিই আনন্দের।
অনুষ্ঠানের মাঝে ৠাফল ড্র বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ৠাফল ড্র পরিচালনা করেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এএসএম রকিবুল হাসান। সহযোগিতায় ছিলেন রাশেদুল হাসান নাদিম, জাফর ইকবাল পারেভেজ, নূরনবী সিদ্দিক সুইন ও আব্দুস সোবহান খন্দকার। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন বিভাগের একসময়ের ছাত্রী সাংসদ সিমিন হোসেন রিমিসহ ডুপডার কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১২
এনএস/