ঢাকা: ঢাকা সফররত ভারতের উড়িষ্যার বিস্ময়, দেশটির কিট ইউনিভার্সিটি ও কিস ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ড. অচুতা সামান্তা শিক্ষার্থীদের মানবসেবার আহবান জানিয়েছেন। গরীবদের সেবা করাই প্রথম ধর্ম উল্লেখ করে আজীবন তা করে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকেলে মিরপুরের নৌবাহিনীর শহীদ মোয়াজ্জেম হলে সাইক গ্রুপ অব ইন্সটিটিউশন আয়োজিত সেমিনারে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।
সাইক গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু হাসনাত মো: ইয়াহিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, গরীবদের সেবা করাকেই প্রধম ধর্ম মনে করি। গরীবদের জন্য জীবন দিয়েছি। ১০ লাখ মানুষের খানাপিনা নির্ভর করছে এখন ছোট্ট এই মানুষটির ওপর। মানুষের ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট। তাহলে ঈশ্বর সবই করে দেন। আমি তাই সবাইকে এ আহবানই জানাই।
এ সময় তিনি সাইক গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া একজন গরীব ছেলে/মেয়েকে কিট ইউনিভার্সিটিতে ফ্রি পড়াশোনা করার সুযোগ দেওয়ারও ঘোষণা দেন।
পরে তার কর্মময় জীবনের ওপর ২০ মিনিটের একটি ভিডিওচিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। এসময় পুরো হলে পিনপতন নীরবতা লক্ষ্য করা যায়।
এ চিত্রে উঠে আসে খুবই দরিদ্র ঘরের অনেক ভাইবোনের মাঝে জন্ম নেওয়া ড. সামান্তার বেড়ে ওঠাসহ আজকের বিস্ময়ধমী মানবসেবকের নানা অর্জনের কথা।
অনুষ্ঠানে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাকে সম্মাননা জানানো হয়। উত্তরীয় পরিয়ে দেন সাইক গ্রপ ইন্সটিটিউশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি সোহেলী ইয়াছমিন।
ড. সামান্তা বাংলাদেশে সাইক গ্রুপকে তার মতো অনাথ, গরীব মানুষদের জন্য প্রতিষ্ঠান করারও আহবান জানান। এবং সম্ভাব্য সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, মোঃ শাহজাহান মিঞাঁ, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবুল কাসেম, কিট ইউনিভার্সিটির রেক্টর ড. সত্যেন্দ্র পাটনায়ের, ডুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সরকারের স্কিলস অ্যান্ড ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের(স্টেপ) পরিচালক গোলাম মোঃ জহিরুল আলম।
অনুষ্ঠানের অন্য বক্তারাও ড. সামান্তার নানা উদ্যোগকে মানবসেবার বিরল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে উচ্ছসিত প্রশংসা করেন।
এছাড়াও তারা কারিগরি শিক্ষা নেওয়া শিক্ষার্থীদের দেশে এবং দেশের বাইরে কর্মসংস্থান, সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, অচুতা সামান্তা জীবন যুদ্ধের কঠিন লড়াইয়ের মাধ্যমে উড়িশ্যার ভুবেনশ্বরে শুধু মাত্র একার চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন অসাধারণ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একটি কিট ইউনিভার্সিটি ও আরেকটি কালিঙ্গা ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্স(কিস)।
তবে কিট ইউনিভার্সিটি তো বটেই, সামান্তাকে অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে গেছে কিস নামক প্রতিষ্ঠানটি ও তার ১৫ হাজার আদিবাসী ছাত্রছাত্রী। আর প্রায় ১০ হাজার গরীব ছেলে-মেয়েকে প্রতিবেলায় খাওয়ানো হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে।
১৯৯৩ সালে মাত্র ১২৫ জন আদিবাসী ছাত্রকে দিয়ে যার যাত্রা শুরু। টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিচারে ২০১১ সালে তিনি হয়েছেন আইকন অব উড়িষ্যা। সমাজসেবায় অবদানের জন্য ভারত থেকে তো বটেই, স্বীকৃতি পেয়েছেন কম্বোডিয়া, স্কটল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ থেকে।
বৃহস্পতিবার বেসরকারি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ৪র্থ সমাবর্তনে তাকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি দেওয়া হবে। আর বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্মানসূচক ডিগ্রি এটাই প্রথম।
সভাপতির বক্তৃতায় আবু হাসনাত মো: ইয়াহিয়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ড. সামান্তার উদ্যোগের মতো নিজেও কিছু করতে চান বলে আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৪