ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৪’ এর উদ্বোধনকালে তিনি এ ঘোষণা দেন।
‘শিক্ষাই জীবনের মূল, ঝরে পড়া বিরাট ভুল’ শীর্ষক স্লোগানে শুরু হওয়া শিক্ষা সপ্তাহ আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার ছেলে চাই। সেই সোনার ছেলে গড়ার কারিগর শিক্ষকরা। সত্যিকার অর্থে সোনার ছেলেদের হাতেই আমরা ভবিষৎ দেশের দায়িত্ব দিয়ে যেতে চাই। শিক্ষার্থীদের ভালো মন্দ শেখানোর পবিত্র দায়িত্ব আপনাদের।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীর হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ছয় হাজার ৪০০ টাকায় (গ্রেড-১১), বর্তমানে যা পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা।
অন্যদিকে, প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের মূল বেতন স্কেল ধরা হবে পাঁচ হাজার ৯০০ (গ্রেড-১২) টাকা। বর্তমানে তারা পেয়ে থাকেন পাঁচ হাজার ২০০ টাকা।
আগের ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারি বিদ্যালয়ের পাশাপাশি নতুন সরকারি হওয়া প্রায় ২৩ হাজার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই সুবিধা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বিষয়ে কিছু না বলায় এ নিয়ে উপস্থিত সহকারী শিক্ষকরা হতাশা প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন, এতে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের দূরত্ব বাড়বে।
২৪ মিনিট ১৭ সেন্ডের বক্তব্য বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে শিক্ষা খাতের ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বানচাল করতে আন্দোলনের নামে স্কুল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা ৫৮২টা স্কুল পুড়িয়ে দেওয়াসহ অসংখ্য নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনগণকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা নৈরাজ্য করছে তারা কি চায় ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা না করে সন্ত্রাস করুক, দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং করুক? তারা কি চান না ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষিত হোক? আগামী দিনের নেতৃত্ব শিক্ষিত হোক?
প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গতবার স্কুল-কলেজে কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। এবারের লক্ষ্য প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল বই ই-বুকে রূপান্তর করছি। তাদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার থাকুক।
বিগত সময়ে শিক্ষা খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর মসজিদভিত্তিক শিক্ষাসহ নানামুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করি। ৪৫ ভাগ থেকে ৬৫ ভাগে উন্নীত করি। আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে এই হার ৪৭ ভাগে নামিয়ে আনে। ২০০৮ সালে আমরা আবার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষার উন্নয়নে কাজ শুরু করি। শিক্ষার মান উন্নয়নে উৎপাদনমুখী, বিজ্ঞানসম্মত ও যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষা নীতিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই।
ভবিষ্যতে ছেলেদেরও উপবৃত্তি দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রীরা উপবৃত্তি পায়। ভবিষ্যতে ছেলেদেরও উপবৃত্তি দেওয়া হবে। ডিগ্রি পর্যন্ত যাতে ছেলে-মেয়েরা বিনা বেতনে পড়তে পারে আমরা সে ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি।
মিড ডে মিল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা স্কুল যদি নিজ উদ্যোগে ফান্ড তৈরি করে শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া হ্রাস পাবে। অনেকে এটা করছে। আমরা এতে খুব ভালো ফলাফল পাচ্ছি। স্কুল কমিটিগুলো এ ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে, প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার অনেক কমেছে। এটিকে শূন্যের কোঠায় নিতে আসতে হবে। এক্ষেত্রে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা খুব ভালো ফল দেবে।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের জন্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠদের পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সহ-শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সচিব কাজী আখতার হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, এমপি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৪