ঢাকা: এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্ত নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের দু’দিন পর গঠিত তদন্ত কমিটির ১৫ কার্যদিবস শেষ হচ্ছে।
গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের সৃজনশীল এবং ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজির পরীক্ষা স্থগিত করে দু’টি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
সোমবার মন্ত্রণালয়ে আড়াই ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করেও কোনো ফয়সালা করতে পারেন নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক বোর্ডের সচিব আব্দুল সালাম হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি নিয়ে সোমবার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এমন আভাসও দেন তিনি।
মন্ত্রণালয়সূত্র বলছে, রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার অনুপস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে দু’টি কমিটি এখন পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতাদের শনাক্ত করতে পারেনি। এজন্য কমিটিকে আরো ১৫ দিন সময় দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।
আব্দুল সালাম হাওলাদার বলেন, এর আগে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনার প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। এবার আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা আছে। আমাদের সাদা চোখে এসব কালো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা মুশকিল। তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে তদন্তের নামে কালক্ষেপণের অভিযোগ উঠেছে গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা বোর্ডে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু এর আগেই পরীক্ষার সবক’টি সেট ফাঁস হয়ে যায়। ওই ঘটনা তদন্তে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দু’টি কমিটিকেই ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। কারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল বা কোথা থেকে ফাঁস হয়েছে তার কোনো হিসেব মিলছে না এখনও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবারই প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের নামে কালক্ষেপণ করা হয় মাত্র। গত ৩৫ বছরে অন্তত ৭৮টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও তদন্ত কমিটি হয়েছে ২৩টিতে। আর বাতিল ও স্থগিতের ঘটনা ঘটেছে সর্বোচ্চ ১২টি।
যেসব জায়গা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকতে পারে সেসবের মধ্যে বিজি প্রেস অন্যতম। অতীতে বিজি প্রেস থেকে একাধিকবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এছাড়া যে কমিটি প্রশ্ন নির্বাচন করে সে কমিটি থেকেও প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকতে পারে। এর বাইরে যারা প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত তারাও কোচিং সেন্টারে প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়ে থাকতে পারেন। সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের হার অনেক বেড়েছে। বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার। সরকারের উদাসীনতা ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট।
প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় এ শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুই-একটি ছাড়া অধিকাংশেরই শাস্তির নজির নেই। শাস্তি না হওয়ায় জড়িতরা আরও উৎসাহিত হয়ে থাকেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিসিএস, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা, সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, অডিট, এনবিআর, এটিইও, মেডিকেল, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসি, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্তত ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থগিত করা হয় ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা ও অগ্রণী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা।
সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী ১৯৭৯ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪