ঢাকা: দেশে কর্মক্ষম লোকের ৮০ শতাংশ দক্ষ নয়। আর দক্ষ লোকবল ছাড়া স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সামিট অন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট-২০১৪ এর ‘স্কিল বেইজ এডুকেশন ফর লাইফ, লাইভলিহুড অ্যান্ড প্রোসপারিটি’ শীর্ষক ওই সেমিনারটির আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংস্থা এমিনেন্স।
বক্তারা বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে অর্থ যোগ হলে উৎপাদনের জন্য বাড়তি মাত্রা যোগ হয়। উৎপাদন বেড়ে উন্নয়ন স্থায়িত্বশীল হয়। কিন্তু সেখানে দক্ষ লোকবলই যদি না থাকে, তবে উৎপাদন বাড়বে কি করে? এদেশে কর্মক্ষম লোকবলের ৮০ শতাংশই অদক্ষ। তাই স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য দক্ষ লোকবল তৈরি করতে হবে। আর এজন্য দরকার জীবনের দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা।
এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দক্ষতায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে কিভাবে দক্ষ লোকবল তৈরি করা যায়, তার জন্য গবেষণা করতে হবে। কিন্তু গবেষণার জন্য আমাদের তেমন বরাদ্দ নেই বললেই চলে। যেখানে চীন, আমেরিকায় বছরে ৩ লাখের বেশি গবেষণা করা হয়।
ইনস্টিটউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) সভাপতি একেএমএ হামিদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশনের (আইএলও) সিনিয়র টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট ফ্রান্সিস ডি সিলভা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাইরেক্টরি অব টেকনিক্যাল এডুকেশনের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুর রফিক। সঞ্চালনা করেন টিটিটিসি’র সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোক চিন্তা প্রতিবন্ধী। তারা কোনো কাজ না পারলে বিকল্প চিন্তা করেন না। হাল ছেড়ে দেন। মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন না। সরকার ইতোমধ্যে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য গবেষণায় বরাদ্দ আগের চেয়ে বাড়িয়েছে। আরো বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা গত সহস্রাব্দে অনেক পিছিয়ে গেছি। এই সহস্রাব্দে সে ঘাটতি আমাদের মেটাতে হবে। এজন্য সবাইকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ শুধু পরিশ্রম আর পরিশ্রম করতে হবে।
ক্ষমতার বাইরে পেশা নির্বাচন করে লাভ নেই বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক দেশে এমন এমন সব কাজকে পেশা হিসেবে নেওয়া হয়, যা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। তাই নিজেদের মতো করেই এগিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথি ফ্রান্সিস ডি সিলভা বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আশা করি এতে সাফল্য আসবে। তবে এদেশের ৮০ শতাংশ কর্মক্ষম লোকবল অদক্ষ। এরাই চ্যালেঞ্জার্স। এদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে উন্নয়নকে স্থায়ী করতে হবে। কেননা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ছাড়া উপায় নেই।
সভাপতির বক্তব্যে একেএমএ হামিদ বলেন, সব ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা জরুরি। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে ছেলে পাস করছে, সে যদি সেই শিক্ষায় পর্যাপ্ত দক্ষ না হয়, সে দায় ওই প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার নিশ্চায়তা দিতে হবে। আমরা যদি প্রযুক্তির সঙ্গে অর্থকে যোগ করি, তবে উৎপাদনে যেতে পারবো। কিন্তু যদি দক্ষ লোকবল না থাকে তবে উৎপাদন হবে কী করে? আর উৎপাদন না হলে বা মান না থাকলে সে উৎপাদনে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন হবে না। এজন্য দরকার জীবনের দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা।
মূল প্রবন্ধ উপস্থানকালে আব্দুর রফিক বলেন, গুণের কোনো নির্দিষ্ট স্তর নেই। এর কেবল অনুমান নির্ভরতা আছে। গুণের শেষ নেই। তাই উৎপাদন হতে হবে মানসম্মত। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে মানসম্মত উৎপাদনে যেতে হবে। এজন্য দরকার দক্ষ লোকবল। কেবল শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই দক্ষ লোকবল তৈরি করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪