ঢাকা: জমির মালিকানার তথ্য গোপন করে জাতীয়করণের সুবিধা নিয়েছে রাজধানীর মিরপুরের চম্পা পারুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর এ কারণে বিদ্যালয়টির জমির একাংশ চলে গেছে দখলদারের হাতে।
সম্প্রতি মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় বিদ্যালয়ের একাংশ দাবি করে একটি পক্ষ তা দখল করে নেয়ায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পাঠানো প্রতিবেদনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গাফলতির তথ্য উঠে এসেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শ্যামল কান্তি ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, তথ্য গোপন করায় বিদ্যালয়টির জায়গা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম মেসবাউল ইসলাম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শিরিন আক্তার এবং মিরপুর থানা শিক্ষা অফিসার মাজেদা সুলতানার পাঠানো পৃথক প্রতিবেদনে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে দোষারোপ করা হয়েছে।
বর্তমানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৯১ জন শিক্ষার্থী ও চারজন শিক্ষক নিয়ে তিনটি প্লটের উপর পরিচালিত বিদ্যালয়টি সম্প্রতি জাতীয়করণ হয়।
চম্পা পারুল বিদ্যালয়টির মূল ভবন আগে থেকেই পরিত্যক্ত হওয়ায় ক্লাস চলছিল ছোট খেলার মাঠে স্থাপিত পাঁচটি টিনশেডের কক্ষে। কিন্তু দখলদার টিনশেডের প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে দিয়ে সেখানে ইটের দেয়াল তুলেছেন। ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে খোলা আকাশের নিচে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করেন- বিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করে তাকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
এ সময় জমিবিরোধ সংক্রান্ত কোন মামলা আছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি মামলা নেই বলে অবহিত করেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করলে জানানো হয়, দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা মামলায় একটি প্লট আদালতের রায় নিয়ে পুলিশের সহায়তায় দখল নিয়েছেন তাহেরা বেগম। এ অবস্থায় জেলা ও থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর।
এস এম মেসবাউল ইসলাম প্রতিবেদনে বলেন, স্পষ্টতই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জমি সম্পর্কে সঠিত তথ্য গোপন করেছেন এবং সত্য কথা বলেননি। জমির মামলা সম্পর্কেও তিনি কখনও জানাননি। এমনকি এমন নির্লিপ্ততার কারণে থানা শিক্ষা অফিস কৈফিয়ত তলব করলেও জবাব দেননি ওই প্রধান শিক্ষক। সরকারের কাছে পাঠানো বিদ্যালয়ের সর্বশেষ জুন ও জুলাই মাসের প্রতিবেদনেও মামলার বিষয়টি গোপন রাখা হয়।
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, প্রতি প্লটে তিন দশমিক ৭৫ কাঠা হিসেবে মোট জমির পরিমাণ ১১ দশমিক ২৫ কাঠা। এরমধ্যে একটি প্লটের কাগজপত্র থাকলেও বাকি দুটি প্লটের কোন কাগজপত্র নেই, একটি প্লট দখল ছাড়াও অপর একটি প্লট নিয়ে মামলা চলছে।
বেসরকারি বিদ্যালয় হিসেবে নিবন্ধন প্রাপ্তি বা পরবর্তী জাতীয়করণ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি সরকারের নামে রেজিস্ট্রি দলিল করে দেয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত বিদ্যালয়টি কখনই পূরণ করেনি। সকল পর্যায়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথ্য পরিবেশনে গোপন করেছে।
এমতাবস্থায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম মেসবাউল ইসলাম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
তথ্য গোপন করার অভিযোগের বিষয়ে চম্পা পারুল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, তথ্য গোপন এবং বিদ্যালয়টির সমস্যার বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে চম্পা পারুল বিদ্যালয় রক্ষায় শনিবার ছাত্র-শিক্ষক-জনতার ব্যানারে বিদ্যালয়টির সামনে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্যালয়টির একাংশ দখল প্রসঙ্গে কী ব্যবস্থা নেবেন- জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে আপিল করার প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪