ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দুর্নীতিতে বহিষ্কৃত অধ্যক্ষকে ফেরাতে এমপির ডিও!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪
দুর্নীতিতে বহিষ্কৃত অধ্যক্ষকে ফেরাতে এমপির ডিও!

রাজশাহী: রাজশাহীর পবা উপজেলার দারুসা কলেজের বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ আবদুল মান্নানকে এবার একই কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে বসাতে চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে তাকে কলেজে ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ডিমান্ড অর্ডার (ডিও লেটার) দিয়েছেন।



দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১০ সালে আবদুল মান্নানকে দারুসা কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিন বছর পর ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর সকালে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আশরাফ আলীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অধ্যক্ষের পদ দখল করেন আবদুল মান্নান।

তবে মান্নানের সে প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। পরে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্য একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন।  

এ ঘটনার কিছুদিন পরেই পবা-মোহনপুর আসনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা আয়েন উদ্দীন সংসদ সদস্য হন। সে সময় অভিযোগ উঠেছিল, আত্মীয়তার সূত্র থাকায় আয়েন উদ্দীনের ‘গ্রিন সিগনাল’ পেয়েই আবদুল মান্নান অস্ত্রের মুখে কলেজের অধ্যক্ষের পদ দখলের চেষ্টা করেছিলেন।

তবে পবা এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর ‘খাস’ লোক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন আবদুল মান্নান। রাসিক নির্বাচনে বিএনপি দলীয় বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের সদস্যও ছিলেন তিনি।

কলেজের শিক্ষক ও কলেজ পরিচালনা কমিটির অভিযোগ, দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কৃত সেই আবদুল মান্নানকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আবার দারুসা কলেজে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীন গত দেড় মাস আগে নিজেরই মনোনীত বর্তমান কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হারুন-অর-রশিদকে সরিয়ে আবদুল মান্নানকে ফিরিয়ে আনতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ডিমান্ড অর্ডার (ডিও লেটার) দিয়েছেন।

তবে আয়েন উদ্দীন দাবি করেছেন, মান্নানকে কলেজে ফেরাতে কোনো ডিও লেটার দেওয়া হয়নি। দারুসা কলেজে দীর্ঘদিন ধরে নানা সঙ্কট চলছে। তা মেটাতেই কলেজ সভাপতিকে পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা বোর্ডকে বলেছেন তিনি। যদিও কলেজ পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, কলেজে কোনো সঙ্কট নেই। বরং অধ্যক্ষ মান্নানকে সরিয়েই কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
 
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মিয়া ডিও লেটার পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও দাফতরিক কাজে ঢাকায় থাকায় কাগজপত্র না দেখে পুরো বিষয়টি বলতে পারবেন না বলে জানান।

শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আনারুল হক প্রামাণিক জানান, সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীনের একটি ডিও লেটার পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে পরিবর্তনের কথা বলেছেন। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বোর্ড চেয়ারম্যান। তিনি এখন ঢাকায় আছেন, রাজশাহী ফিরে আসার পর আলোচনা করে ডিও লেটারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার দারুসা কলেজ ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতির মাধ্যমে স্ত্রীকে চাকরি দান, কলেজের জমি নিজে ভোগদখল, রেজুলেশন জালিয়াতি, প্যাটার্ন বহির্ভূত শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মান্নানকে ২০১০ সালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ বরখাস্ত করে।

এরপর রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডও অধ্যক্ষ আবদুল মান্নানকে বরখাস্তের বিষয়টি অনুমোদন দেয়। বরখাস্তের প্রতিবাদে অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটের এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।